পর পর ঘটছে প্রবীণদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। কোথাও কাজে আসা পরিচারিকা সঙ্গীকে নিয়ে প্রবীণ দম্পতির হাত-পা বেঁধে লুট করে পালাচ্ছে, কোথাও আবার লুটপাটে বাধা পেয়ে খুন করা হচ্ছে বৃদ্ধাকে। অন্য ঘরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে বৃদ্ধকে। এমনও ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত থাকা কাউকে দিয়ে দরজা খুলিয়ে বা গ্রিল কেটে ঢুকে শয্যাশায়ী প্রবীণের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে চলেছে লুট! কিন্তু পর পর এমন ঘটনা ঘটে চললেও পরিস্থিতির বদল হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে ভাড়াটে এবং গৃহকর্মীদের সম্পর্কে তথ্য পুলিশকে জানিয়ে রাখার জন্য একটি অনলাইন ফর্ম চালু করেছে লালবাজার। অনেকেই বলছেন, এই পদ্ধতিতে প্রবীণদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যের ভান্ডার তৈরি করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে পুলিশ। কিন্তু প্রবীণদের নিরাপত্তার জন্য একই ভাবে ‘প্রণাম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে সেটির সদস্য হওয়ার জন্য ফর্ম পূরণ করিয়েছিল লালবাজার। সেই সময়েও প্রবীণেরা কার সঙ্গে থাকেন, ভাড়াটে আছেন কিনা, পরিচারিকা আছেন কিনা, থাকলে সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। ফলে, প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি শুধু তথ্যভান্ডার তৈরিই সার? কাজের কাজ হচ্ছে কই?
দিনকয়েক আগেই নিউ গড়িয়ার পঞ্চসায়রে ৭৯ বছরের বৃদ্ধাকে খুন করার পরে তাঁর বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছিল এক আয়া। তার পুরুষ সঙ্গী সেই সময়ে বাড়ির বাইরে পাহারায় ছিল। বৃদ্ধার স্বামী, ৮২ বছরের বৃদ্ধকে পরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় বাড়ির ভিতরেই। এই ঘটনার পরেই ফর্ম পূরণের কথা ঘোষণা করে পুলিশ সমাজমাধ্যমে জানিয়েছে, প্রবীণদের নিরাপত্তার জন্য এই ফর্ম পূরণ করে পাঠানো অপরিহার্য। কিন্তু অনেকেই বলছেন, এ শহরে এমন বহু প্রবীণ রয়েছেন, যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহারে ততটা স্বচ্ছন্দ নন। তাঁরা কী ভাবে এই ফর্ম পূরণ করবেন? মধ্য কলকাতার একটি থানার এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘আসল সমস্যা, বাহিনীতে পুলিশকর্মীর অভাব। সাধারণত, প্রতিটি থানায় এক জন করে অতিরিক্ত সাব-ইনস্পেক্টর এবং তাঁর অধীনে দু’জন করে হোমগার্ড বা সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে একটি নোডাল অফিসারদের দল তৈরি করা হয়। সেই দলই থানা চত্বরের প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে। প্রণাম প্রকল্পের কাজ দেখে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই পুলিশে বদলি হয়। কবে, কোন অফিসার আছেন, কে নেই, বোঝা যায় না। নতুন অফিসার এসে ‘প্রণাম’-এর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার মধ্যেই হয়তো তাঁরও বদলির নির্দেশ চলে আসে।’’
এই প্রসঙ্গে অনেকেই তুলছেন পুলিশের ‘প্রণাম’-এর সদস্যদের ‘মেডিক্যাল প্রিভিলেজ কার্ড’ চালু না হওয়ার প্রসঙ্গ। ২০২৩ সালে ‘প্রণাম’-এর সদস্যদের জন্য পুলিশ ‘মেডিক্যাল প্রিভিলেজ কার্ড’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। বলা হয়, ওই কার্ডে দেওয়া কিউআর কোড স্ক্যান করলেই পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট প্রবীণের অসুস্থতার সমস্ত তথ্য। থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ‘প্রণাম’-এর সদস্যদের পুরনো সব প্রেসক্রিপশন জোগাড় করবে। কেন্দ্রীয় ভাবে সেগুলি আপলোড করা থাকবে। প্রবীণেরা যাতে আরও দ্রুত চিকিৎসা পান, সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। একাধিক হাসপাতাল ও ওষুধ বিপণির সঙ্গেও চুক্তির কথা বলা হয় পুলিশের তরফে। কিন্তু কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বললেন, ‘‘এমন প্রকল্পের কাজ কর্তাদের ইচ্ছের উপরেও নির্ভর করে। বহু ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, যে কর্তা এমন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করালেন, তিনি বদলি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেল!’’ কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা যদিও বললেন, ‘‘কাজ হবে বলেই ঘোষণা হয়েছে। এ বার সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’
প্রবীণদের বিরুদ্ধে অপরাধ
অগস্ট: পঞ্চসায়রে বৃদ্ধাকে খুন করে বৃদ্ধের হাত-পা বেঁধে লুট। ধৃত আয়া ও তার সঙ্গী।