• জামিনে থেকেও প্রভাবশালী যোগ জীবনের
    আনন্দবাজার | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • সিবিআই-এর মামলায় জামিন পেয়েছিলেন গত বছর মে মাসে। কিন্তু এর পরেও বিভিন্ন জেলায় তাঁর আত্মীয়-বন্ধুর নামে কেনা সম্পত্তি বিক্রি করে প্রমাণ লোপাটের কাজে জীবনকৃষ্ণ সাহা সক্রিয় ছিলেন বলে ইডির তদন্তে উঠে এসেছে। পাশাপাশি, পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয়দের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখা কালো টাকা সরাতেও তৃণমূল বিধায়কের তৎপরতা গোয়েন্দাদের নজরে আসে।

    নবম, দশম শ্রেণীর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই-এর মামলায় জামিনপ্রাপ্ত জীবনকৃষ্ণের বিষয়ে ইডি-র এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘ওই মামলায় জীবনকৃষ্ণকে তিন বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর আত্মীয়-পরিজনদের নামে থাকা সম্পত্তি এবং ব্যাঙ্কে আমানতে থাকা টাকার উৎস জানাতে পারেননি তিনি। কিন্তু জীবনকৃষ্ণের আত্মীয়-পরিজন জানান, সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানতে থাকা পুরো টাকাই জীবনকৃষ্ণের।

    সোমবার সকালে কান্দির আন্দির বাড়িতে ইডি-র হানার সময়ে নাটকীয় ভাবে ফের জোড়া মোবাইল ঝোপে ছুড়ে ফেলেই বাঁচতে চেয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক। মোবাইল দু’টিই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা উদ্ধার করেছেন। জীবনকৃষ্ণ মোবাইলের পাসওয়ার্ড বলতে চাননি। কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই মোবাইল ফোনের আলাপচারিতার ‘অডিয়ো-ক্লিপ’ এবং বিভিন্ন অ্যাপের চ্যাট উদ্ধার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। ফোন দু’টি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোরও বন্দোবস্ত হচ্ছে। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, আরও বিভিন্ন জেলায় জীবনকৃষ্ণ এবং তাঁর একাধিক যোগসূত্রের ভিতরে আদানপ্রদানের তথ্যপ্রমাণ হিসেবে মোবাইল ফোন দু’টি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

    তদন্তকারীদের দাবি, সার্ভিস প্রোভাইডার মারফত জীবনকৃষ্ণের মোবাইলের সিমের প্রাথমিক তথ্য যাচাই করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যও উঠে এসেছে। তিনি মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হলেও মালদহ, দুই দিনাজপুর, নদিয়া এবং বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তকারীদের দাবি, চাকরি বিক্রির একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন জীবনকৃষ্ণ। প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন এজেন্ট মারফত এসএসসি-র বিভিন্ন পদে অযোগ্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি চাকরির ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ। ২০২১ সালে জীবনকৃষ্ণ বিধায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু তার বহু বছর আগে থেকেই নিয়োগ দুর্নীতিতে তিনি জড়িত ছিলেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।

    ইডি সূত্রে দাবি, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই দিনাজপুর এবং বীরভূমে জীবনকৃষ্ণের আত্মীয়-পরিজনদের নামে, বেনামে অন্তত ২০-২৫ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস পাওয়া যাচ্ছে। আজ, বুধবার বীরভূমের সাঁইথিয়ার বাসিন্দা স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মায়া সাহাকে তলব করেছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, মায়ার সহায়তায় সাঁইথিয়া-সহ বীরভূমের একাধিক জায়গায় শ্বশুরবাড়ির পরিজনের নামে সম্পত্তি কিনেছিলেন জীবনকৃষ্ণ। মায়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওইসব সম্পত্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতেচান তদন্তকারীরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)