পুজোর আগেই ভাঙড় ডিভিশনের নতুন চারটি থানাকে কার্যকর করার চেষ্টা হলেও কার্যত তা হবে না বলেই মনে করছেন লালবাজারের কর্তারা। তবে, চন্দনেশ্বর থানার অধীনে থাকা মাধবপুর থানার ভবন তৈরির কাজ প্রায় শেষ। যদিও সেখানে কবে থেকে থানার কাজ শুরু করা যাবে, তা নিয়ে কোনও পুলিশকর্তাই মুখ খুলতে চাননি। এর মধ্যেই ভাঙড়ে হিংসা রুখতে উত্তর কাশীপুর থানার বিজয়গঞ্জ বাজারে নতুন ফাঁড়ি করতে চাইছেন পুলিশকর্তারা। ইতিমধ্যে সেখানকার একটি সরকারি দোতলা কমিউনিটি হলকে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য চিহ্নিত করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পুলিশের তরফে। ওই ফাঁড়ি তৈরি হলে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে ভাঙড়ের ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন পুলিশকর্তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, ভাঙড়ে আইনশৃঙ্খলাজনিত সবচেয়ে হিংসাত্মক ঘটনাটি ঘটেছিল বিজয়গঞ্জ বাজারে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ওই এলাকায় রাজনৈতিক হিংসায় মৃত্যু হয়েছিল চার জনের। সম্প্রতি ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা রাজ্জাক খানও খুন হন ওই এলাকায়। আবার মাসকয়েক আগে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে আইএসএফের ডাকা সমাবেশে আসা সমর্থক ভর্তি গাড়িকে পুলিশ বিজয়গঞ্জ বাজারে আটকে দিলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি এবং মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়। দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকার সময়ে পুলিশকর্মীদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতেও দেখা গিয়েছিল সে দিন।
পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে বিজয়গঞ্জ বাজার থানার কাজকর্ম চলে উত্তর কাশীপুর থানা থেকে। অভিযোগ, পৃথক থানা হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে থানার কাজকর্ম চালানোর মতো কোনও বহুতলের খোঁজ মেলেনি। তার পরেই ওই এলাকায় একটি ফাঁড়ি তৈরি করে গোলমাল নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে পুলিশ। তবে, ওই ফাঁড়ি তৈরি হলেও সেখানে কত জন পুলিশকর্মী থাকবেন, সেই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সূত্রের দাবি।
উল্লেখ্য, মাসকয়েক আগে ভাঙড়ের নতুন চারটি থানা— হাতিশালা, বিজয়গঞ্জ বাজার, মাধবপুর এবং বোদরা যাতে পুজোর আগে চালু করা যায়, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরা। বর্তমানে ওই চারটি থানা চালু থাকার সরকারি বিজ্ঞপ্তি থাকলেও তা চলছে যথাক্রমে পোলেরহাট, উত্তর কাশীপুর, ভাঙড় এবং চন্দনেশ্বর থানা থেকে। পোলেরহাট, উত্তর কাশীপুর, ভাঙড় এবং চন্দনেশ্বর থানার ওসিরাই আদেশবলে হাতিশালা, বিজয়গঞ্জ বাজার, বোদরা এবং মাধবপুর থানার দায়িত্বে রয়েছেন।
পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, ভাঙড়ের হিংসা নিয়ন্ত্রণ করতে ওই এলাকাকে বছর দুয়েক আগে কলকাতা পুলিশের অধীনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেটালবাহানার শেষে গত বছর জানুয়ারি থেকে ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অধীনে কাজ শুরু করে। সে সময়ে চারটি থানা নিয়ে কাজ শুরু করা হলেও কথা ছিল, দ্রুত বাকি চারটি থানাকেও কার্যকর করে তোলা হবে। কিন্তু মাধবপুর ছাড়া বাকি তিনটি নতুন থানার জন্য কোনও ভবন না পাওয়ায় এ বার ভবন তৈরির জন্য জমির খোঁজ শুরু হয়েছে।
এ দিকে, ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা রাজ্জাককে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার জন্য বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগরপাল। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় এখনও কত জন পলাতক, সেই বিষয়টিও তিনি জানতে চেয়েছেন বলে সূত্রের দাবি।