• আইন আছে খাতা কলমে, সঙ্গী অত্যাচার, পেট ভরে না সারমেয়র
    এই সময় | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    সম্প্রতি দিল্লির পথ কুকুরদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তোলপাড় গোটা দেশ। সংশোধিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছ কোনওভাবেই পথ কুকুরদের রাস্তায় খাবার দেওয়া যাবে না। স্থানীয় পুরসভা পথ কুকুরদের নির্দিষ্ট স্থানে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবে। গত বছর কলকাতা হাইকোর্টও রাজ্যের প্রতিটি পুরসভাকে কুকুরের খাওয়ানোর জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

    কয়েক মাস আগে শিক্ষা দপ্তর স্কুলের মিড ডে মিলের উদ্বৃত্ত খাওয়ার পথ কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য নির্দেশিকা জারি করে। পথ কুকুরদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে দেশে আইনি রয়েছে। রয়েছে এক গুচ্ছ নির্দেশিকাও। কিন্তু সেগুলির বাস্তব প্রয়োগ হচ্ছে কোথায়?

    খাবার জোগাড় করতে গিয়ে মানুষের অত্যাচারের মুখে পড়তে হচ্ছে সারমেয়দের। সারমেয়দের লক্ষ্য করে বাজি ফাটানো, দোলের সময় রং দেওয়ার মতো ঘটনারও বিরাম নেই। মঙ্গলবার ছিল জাতীয় সারমেয় দিবস। প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে দিনটি। কিন্তু পথ কুকুরদের অবস্থার কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে? প্রশ্ন তুলছেন পশুপ্রেমীরা।

    পথ কুকুরদের খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে বচসা এবং মারধরের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অর্ণব চক্রবর্তী নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক বাসিন্দা। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরকে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানানোর নির্দেশ দেন। পথকুকুরদের কখন, কোথায়, কী ভাবে খাওয়াতে হবে তা নিয়ে গত বছর ২৫ নভেম্বর একটি নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সরকার।

    কলকাতা হাই কোর্ট সেই নির্দেশিকা সমস্ত পুরসভায় পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাজ্যের নির্দেশিকা অনুযায়ী, পুরসভার তরফে প্রতিটি ওয়ার্ডে কয়েকটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সেখানেই খাওয়ানো যাবে পথকুকুরদের। কোথায়, কী ভাবে পথকুকুরদের খাওয়াতে হবে সমস্ত কিছু বল হয় নির্দেশিকায়। এমনকী কুকুরদের কী ধরনের খাবার দেওয়া যেতে পারে তাও বলা হয় নির্দেশিকায়।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া, তমলুক, হলদিয়া, কাঁথি এবং এগরা পুরসভাতেও সেই নির্দেশিকা এসে পৌঁছয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটিও পুরসভা পথ কুকুরদের খাওয়ানোর জায়গা নির্দিষ্ট করেনি বলে অভিযোগ পশুপ্রেমীদের। পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন নন্দ কুমার মিশ্র বলেন, 'প্রতিটি ওয়ার্ডে পথ কুকুরদের খাওয়ানোর মতো জায়গা পাওয়া যায়নি। তবে শহরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় পশুপ্রেমীরা নিয়মিত খাবার দেন। এ ব্যাপারে পুরসভার সহযোগিতা রয়েছে।'

    তমলুক পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্র নারায়ণ রায় বলেন, 'আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়ে বলছি তমলুক শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ধরনের জায়গা পাওয়া যাবে না। কিছু পশু প্রেমী কয়েকটি জায়গায় পথকুকুরদের খাওয়ান। ওই জায়গাগুলিকে আমরা সুরক্ষিত করে দেব।'

    খাবার না পেয়ে অনেক সময় পথ কুকুরেরা পড়ুয়াদের কামড় দেয় এমন বহু নজির রয়েছে। স্কুলে মিড ডে মিলের উদ্বৃত্ত খাবার পথ কুকুরদের দেওয়ার জন্য গত এপ্রিল মাসে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা পশু-অধিকার কর্মী মানেকা গান্ধী সমগ্র শিক্ষা মিশনকে প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে বলা হয় শিশুদের ওপর পথ কুকুরদের আক্রমণ ঠেকাতে স্কুল চত্বরে প্রতদিন বিকেলে একবার কুকুরদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্কুলের মিড ডে মিলের দায়িত্বে থাকা স্বসহায়ক গোষ্ঠীর একজনকে বিষয়টি তদারকির দায়িত্বে রাখা যেতে পারে।

    প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন আধিকারিকের সাহায্য নিয়ে স্কুল চত্বরে থাকা পথ কুকুরদের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণ করানো যেতে পারে। স্কুলে এই ব্যবস্থা করা গেলে পড়ুয়ারা পশুপাখিদের যেমন যত্ন নিতে শিখবে তেমন তাদের প্রতি তারা সহানুভূতিপরায়ণও হয়ে উঠবে। স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সচিব এবং পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের রাজ্যের প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের তরফে এই সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু স্কুলগুলির কাছে এখনও এ সংক্রান্ত কোনও নোটিস আসেনি বলে অভিযোগ।

    স্কুলে পথ কুকুরদের খাওয়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী নন মিড ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরাও। কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, 'রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি সামনে আসার পরে আমাদের স্কুলের রাঁধুনিরা আমাকে একটি স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছেন তাঁদের পক্ষে কুকুরদের খাওয়ানো সম্ভব নয়। তার কারণ ওঁরা কুকুরের কামড় থেকে ভয় পান।'

    বিষয়টি নিয়ে সরব পশুপ্রেমীরা। বিধাননগর হেল্প স্ট্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদিকা জুঁই চক্রবর্তী বলেন, 'পথ কুকুররা যে এলাকায় থাকে সেই এলাকা ছেড়ে যেতে চায় না। তাই কুকুরদের খাওয়ানোর দু'একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব। সরকারি স্কুলের বাচ্চারা কতটুকু মিড ডে মিল পায় তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। উদ্বৃত্ত খাবারের প্রশ্ন আসছেই না। শুধুমাত্র আইন করে পথ কুকুরদের সুরক্ষিত করা যাবে না। এর জন্য আমাদের সবাইকে মানবিক হতে হবে। প্রতি পাড়ার মানুষজন যদি মানবিক হন তাহলে কোনও পাড়ার পথ কুকুর অভুক্ত থাকবে না। কুকুরের পেট ভর্তি থাকলে ওরা কামড়াবেও না। ওদের প্রতি আমরা দরদি হলে ওদের লক্ষ্য করে বাজি ফাটানো, রং দেওয়ার ঘটনাও ঘটবে না।'

  • Link to this news (এই সময়)