গোরুমারায় তিন নতুন অতিথি! দেখভালে দিনরাত ব্যস্ত বনকর্মীরা, ‘স্কুলে’ যাচ্ছে হস্তীশাবক যোদ্ধা, করছে ঘুরতে যাওয়ার ‘বায়না’
বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: গোরুমারায় তিন নতুন অতিথি। তাদের দেখভালেই এখন দিনরাত ব্যস্ত বনকর্মীরা। পরপর দু’টি গন্ডার শাবকের জন্ম হয়েছে গোরুমারার জঙ্গলে। সেইসঙ্গে মেদলা ক্যাম্পে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে ‘রামি’ নামে এক কুনকি। ফলে নয়া অতিথিদের ঘিরে খুশির হাওয়া বনদপ্তরের অন্দরে। তাদের অবশ্য আনন্দের আরও একটি কারণ রয়েছে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বেঁচে যাওয়া হস্তীশাবক ‘যোদ্ধা’ আর কয়েকদিন পরই পা দিতে চলেছে এক বছরে। তার প্রথম জন্মদিন সেলিব্রেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর। পুরোদস্তুর ট্রেনিং চালু না হলেও ধীরে ধীরে কুনকিদের ‘পাঠশালা’য় যাওয়া শুরু করেছে সে। বিকেল হলেই ঘুরতে যাওয়ার ‘বায়না’ ধরছে। যোদ্ধার ‘আবদার’ মেটাতে তাকে নিয়ে রোজই জঙ্গলে বেড়াতে যাচ্ছেন মাহুত। মঙ্গলবার গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, আমাদের জন্য সত্যিই খুশির খবর যে, গোরুমারায় সম্প্রতি তিন নতুন অতিথি এসেছে। দু’টি গন্ডার শাবকের জন্ম হয়েছে। শাবক দু’টি মায়ের সঙ্গেই সারাক্ষণ লেপ্টে থাকছে। তাদের দেখভালে আমরা বিশেষ টিম গঠন করেছি। যেহেতু এখন বর্ষার মরশুম চলছে, ফলে কোনওভাবে যাতে সদ্যোজাত গন্ডার শাবক দু’টি নদীর কাছাকাছি চলে না আসে, সেদিকে নজর রাখছেন বনকর্মীরা। ডিএফও বলেন, মেদলা ক্যাম্পেও এখন খুশির হাওয়া। কারণ আমাদের ডিপার্টমেন্টাল হাতি রামি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। ওই কুনকি তো নিজে তার সন্তানের দেখভাল করছেই। সঙ্গে বনকর্মীরাও নজর রাখছেন। পশু চিকিৎসক মাঝেমধ্যেই এসে দেখে যাচ্ছেন। তবে গোরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের কর্মীরা যে এখন ‘যোদ্ধা’কে ঘিরে সবচেয়ে বেশি খুশি তা স্বীকার করে নিয়েছেন বনকর্তারা। গতবছর নাগরাকাটার হিলা চা বাগানের কাছ থেকে ওই হস্তীশাবককে উদ্ধার করা হয়। জলঢাকা নদীতে ভেসে এসেছিল সে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র দু’সপ্তাহ। দীর্ঘপথ পাহাড়ি নদীতে ভেসে আসায় শাবকটির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল। ফলে তাকে বাঁচানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বনদপ্তরের কাছে। জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে শুরু হয় চিকিৎসা। ডাক্তারের নির্দেশমতো ওষুধ, খাবার নিয়ে সবসময় হাজির থাকতেন বনকর্মীরা। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়ে ওঠে সে। এদিন ডিএফও বলেন, হিলা বাগান থেকে উদ্ধার হওয়া হস্তিশাবকটিকে বাঁচাতে পেরে আমরা সত্যিই খুশি। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের হস্তীশাবককে বাঁচানো সম্ভব হয় না। জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছে শাবকটি। সেকারণে ওর নাম দেওয়া হয়েছে যোদ্ধা। কিছুদিন পরই যোদ্ধার এক বছরের জন্মদিন। আমরা সেলিব্রেট করব। ওই হস্তীশাবকটি এখন কচি ঘাস খাচ্ছে। পুরোদমে ট্রেনিং শুরু না হলেও মাঝেমধ্যেই কুনকিদের ‘পাঠশালা’য় যাচ্ছে। ঘুরতে যাওয়ার ‘বায়না’ও করছে। মাহুত ওকে রোজই জঙ্গলে ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছেন।