বাঁকুড়ার টেরাকোটায় সাজবে ছত্তিশগড়ের মণ্ডপ, ৩ হাজার পুতুল তৈরিতে তুমুল ব্যস্ততা
প্রতিদিন | ২৭ আগস্ট ২০২৫
দেবব্রত দাস, তালডাংরা: টেরাকোটার মডেল পুতুল দিয়ে এবার সাজবে সুদূর ছত্তিশগড়ের বাঙালি ক্যাম্পের দুর্গা মণ্ডপ। বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের পাঁচমুড়ার মৃৎশিল্পীদের তৈরি টেরাকোটার মাটির ছোট ছোট মডেল পুতুল পাড়ি দেবে সেখানে। ফি বছর একাধিক জায়গা থেকে মাতৃমূর্তির বরাত আসে। এবার তা না পেলেও টেরাকোটার বিভিন্ন মডেল পুতুলের বরাত পেয়েছেন পাঁচমুড়ার মৃৎশিল্পীরা। টানা বৃষ্টির জেরে কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আর কিছুদিন পরেই পুজো। তাই ছত্তিশগড়ের পুজো মণ্ডপ সাজানোর পুতুল তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করতে শিল্পীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।
বাঁকুড়ার মৃৎশিল্পীদের গ্রাম বলে বিশেষ পরিচিত পাঁচমুড়া। এই গ্রামের শিল্পীদের হাতে তৈরি টেরাকোটার শিল্প রাজ্য, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়েছে। দুর্গাপ্রতিমা কলকাতা-সহ দেশের নানা জায়গার মণ্ডপে স্থান পেয়েছে। কিন্তু এবার টেরাকোটার তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর কিছু বরাত মিললেও দুর্গাপ্রতিমার বরাত একটাও মেলেনি। তবে পাঁচমুড়ার মৃৎশিল্পী তাপস কুম্ভকার ও তাঁর একটি টিম এবার ছত্তিশগড়ের মণ্ডপসজ্জার জন্য মডেল পুতুলের বরাত পেয়েছেন। একই সঙ্গে আরামবাগের এবং শ্রীরামপুরেও মণ্ডপসজ্জার জন্য বড় বড় মডেল পুতুলের বরাত মিলেছে।
মৃৎশিল্পী তাপস কুম্ভকার বলেন, “ছত্তিশগড়ের রাইপুরে একটি পুজো মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে দক্ষিণ ভারতের কোন মন্দিরের আদলে। সেই থিমের মণ্ডপের ভিতরের কারুকার্য পুরোপুরি সাজানো থাকবে আমাদের তৈরি টেরাকোটার মডেল পুতুলে। ৬ ইঞ্চি থেকে এক ফুটের ওই মডেল পুতুল তৈরি করা হচ্ছে। মডেলগুলি হচ্ছে কুলো পুতুল, ধামসা মাদল, কলসি নিয়ে মহিলা জল আনতে যাচ্ছে, এইরকম নানা ডিজাইনের। তিন হাজারের বেশি বিভিন্ন রকমের মডেল পুতুল ওই মণ্ডপসজ্জার ভিতরে শোভাবর্ধন করবে। ছত্তিশগড়ের ওই পুজো মণ্ডপ কমিটি প্রায় ২ মাস আগে এই ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বরাত দিয়েছেন। তারপরেই আমরা সেই কাজ শুরু করে দিয়েছি।”
তাপস কুম্ভকার আরও বলেন, “তবে শুধু ছত্তিশগড়ের পুজো মণ্ডপ নয়, আরামবাগ ও শ্রীরামপুরের দুটি মণ্ডপসজ্জাতেও আমাদের তৈরি বিভিন্ন মডেলের টেরাকোটার মূর্তি ভাস্কর্য শোভাবর্ধন করবে। আরামবাগে বড় বড় মিউজিক সেট, হাতি ঘোড়া, পেঁচা মিলিয়ে ১০০ পিস যাবে। এগুলি এক ফুট বাই চার ফুট সাইজের। আরামবাগের পুজো কমিটি এর জন্য ৮০ হাজার দেবে বলেছে। শ্রীরামপুরেও পুতুলের নানা মডেল যাচ্ছে। তার জন্য ২২ হাজার টাকা বরাত পেয়েছি।” এই কাজের সঙ্গে জড়িত মৃৎশিল্পী তাপস কুম্ভকারের বাবা অনাদি কুম্ভকার, দাদা শিবু কুম্ভকার বলেন, “যেসব মডেল পুতুল বানানো হচ্ছে সেগুলিতে কেউ বাঁশি বাজাছে, কেউ ধামসা মাদল বাজাচ্ছে। আবার এক সেটে রয়েছে মিউজিক পুতুল। ৬ থেকে ৭টি সেট রয়েছে। এর সঙ্গে বড় বড় সাইজের হাতি, ঘোড়া, লক্ষ্মী, পেঁচাও তৈরি করা হয়েছে। আমরা নিজেরা হাতে করে এই শিল্পকর্ম তৈরি করছি। প্রতিমা তৈরির বরাত না পেলেও এই সামগ্রী তৈরির কাজ করে আমরা খুশি।”