গুরুদণ্ড! শিক্ষিকার থাপ্পড়ে অজ্ঞান কিশোরী, থানায় নালিশ পরিবারের
বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, মানিকচক: লঘু অপরাধে গুরুদণ্ড! সহপাঠীর সঙ্গে বচসার সময় চিৎকার করেছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী। ‘শিক্ষা’ দিতে শিক্ষিকা থাপ্পড় মারায় অজ্ঞান কিশোরী। সেই ঘটনার জল গড়িয়েছে থানা পর্যন্ত। মানিকচক হাইস্কুলের শিক্ষিকা মানসী মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে পরিবার। তদন্ত শুরু করে পুলিস ডেকে পাঠিয়েছে শিক্ষিকাকে।
স্কুলের পাশেই বাড়ি মেহেক খাতুনের। ঘটনা সম্পর্কে স্কুল ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিদ্যালয় চলাকালীন সহপাঠীর সঙ্গে বই দেওয়া নেওয়াকে কেন্দ্র করে বচসা হয় মেহেকের। সেই সময় চিৎকার করেছিল আক্রান্ত কিশোরী। ঘটনাক্রমে ঠিক তখনই শ্রেণিকক্ষে আসেন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মানসী। তিনি মেহেককে চিৎকার করতে দেখে থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ। ছাত্রীর পরিবারের দাবি, শিক্ষিকার মারে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় মেহেক। তৎক্ষণাৎ সেই শিক্ষিকা ও অন্যান্য সহপাঠীর তৎপরতায় জ্ঞান ফিরে আসে। তবে, অসুস্থ বোধ করায় খবর দেওয়া হয় মেহেকের পরিবারকে। বিদ্যালয়ে এসে তাঁরা ছাত্রীকে নিয়ে যান মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে। তাদের সঙ্গে ছিল কয়েকজন সহপাঠী। কিন্তু সেখানেও কিছুক্ষণ সংজ্ঞাহীন থাকায় ঝুঁকি নেননি চিকিত্সকরা। দ্রুত মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থানান্তর করা হয় ছাত্রীকে। সেখানে চিকিৎসার পর বুধবার বাড়ি নিয়ে আসা হয় ছাত্রীটিকে।
এদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় ছাত্রীর পরিবার। জানতে চান কেন তাঁদের মেয়েকে এভাবে মারা হয়েছে। প্রথমে মারধরের কথা অস্বীকার করে বিদ্যালয়। যদিও পরে ঘটনার কথা স্বীকার করা হয় বলে দাবি পরিবারের। তাঁরা এরপর স্কুল থেকে সোজা থানায় হাজির হন। সেখানে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীর বাবা শেখ আজিমুদ্দিন। তিনি বলেন, মেয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে বলে খবর দেওয়া হয় স্কুল থেকে। সেখানে গেলে জানতে পারি মেয়ে ক্লাসে চিৎকার করায় থাপ্পড়ের পাশাপাশি কিল মেরেছেন এক শিক্ষিকা। মেয়েকে অন্যভাবেও শাসন করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে কেন মারধর করেছেন, তার জবাব দিতে হবে।
আজিমুদ্দিন জানিয়েছেন, মেয়ে চিকিত্সার পর বাড়ি ফিরলেও ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। তাই মানিকচক থানায় শিক্ষিকার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
পুলিস এদিন আহত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে। সেখান থেকে বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা বলেন আক্রান্ত ছাত্রীর সহপাঠী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখে পুলিস। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে থানায়।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকার মন্তব্য, যা বলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বলবেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শ্রুতিকুমার রায় বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তবে, আগে আমাদের জানানো উচিত ছিল ছাত্রীর পরিবারের। স্কুল কর্তৃপক্ষ বা ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে কথা না বলে থানার দ্বারস্থ হয়েছে ছাত্রীর পরিবার। থানা থেকে আমাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। থানার কথা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। তবে, পরিবার ঘটনা সম্পর্কে যা বলছে, ততটা ঘটেনি।
আহত স্কুলছাত্রী মেহেকের বাড়িতে পুলিস। - নিজস্ব চিত্র।