• স্কুলে পড়ানো শিকেয়, তিন বছর কেরানির কাজ করছেন ৬ শিক্ষক
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • গোপাল সূত্রধর, বালুরঘাট: চূড়ান্ত অনিয়ম! বেতন পাচ্ছেন শিক্ষক হিসেবে, কাজ করছেন কেরানির। শিক্ষকতা লাটে তুলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ছয় প্রাথমিক শিক্ষক গত তিন বছর স্কুলে না গিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসে  খাতাপত্র লেখা, কম্পিউটারে ডেটা আপডেট এবং আর্থিক হিসেবপত্রের কাজকর্ম করছেন বলে অভিযোগ। যা নিয়ে একাংশ শিক্ষকের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। 

    অফিসে কাজ করা শিক্ষকরা অবশ্য জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের জেলা চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদার অর্ডার অনুযায়ীই তাঁরা কাজ করছেন। এদিকে চেয়ারম্যান এর পিছনে অফিসে কর্মী সঙ্কটের যুক্তি দিচ্ছেন।

    দিনের পর দিন অনিয়ম চলতে থাকা নিয়ে সরব বিরোধী দলগুলি। তাদের অভিযোগ, শাসকদলের ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের সুবিধা পাইয়ে দিতেই চেয়ারম্যানের অফিসে রাখা হয়েছে।

    সন্তোষ বলেন, কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য নয়, দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি অফিসে কর্মী সঙ্কট চলছে। মাত্র আটজন স্থায়ী কর্মী। তাঁদের পক্ষে সব কাজ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই ৬ জন শিক্ষককে স্কুল থেকে এনে অফিসের কাজ সামলাচ্ছি। তবে, কর্মী নিয়োগের জন্য শিক্ষাদপ্তরে জানিয়েছি। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে আর অসুবিধা হবে না। 

    প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ১ হাজার ১৮৪ টি প্রাথমিক স্কুল। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষক রয়েছেন। ডিপিএসসি থেকে ১৭টি সার্কেলের স্কুলের কাজকর্ম হয়। সেসব সামলাতে ৫৬ জন কর্মী থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র ৮ জন। এছাড়া বেসরকারি সংস্থার দু’জন অস্থায়ী কম্পিউটার কর্মী ও ছয় শিক্ষককে এনে বেতন, ছুটি, পিএফ, লোন সহ নানা কাজ করানো হচ্ছে। 

    অভিযোগ, জেলার অনেক স্কুলে শিক্ষকদের সমবণ্টন নেই। স্কুলে শিক্ষার্থীদের অনুপাতে শিক্ষক কম। তা সত্ত্বেও ওই ছয় শিক্ষককে অফিসে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন বলেন, চেয়ারম্যানের অর্ডার অনুযায়ী কাজ করছি। স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ পেলে চলে যাব।

    বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক শংকর ঘোষ। তাঁর মন্তব্য, আমরা চাই শিক্ষকরা স্কুলে ফিরে যান। কাউকে সুবিধা করে দিতে বা শাসকদল ঘনিষ্ঠ বলে অফিসের কাজ করানো যাবে না। অবিলম্বে কর্মী নিয়োগ করে এই সমস্যা মেটাতে হবে।

    শাসকদলের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি রাজ নারায়ণ গোস্বামীর কথায়, কর্মী সঙ্কট রয়েছে বলে ওই শিক্ষকদের অফিসে এনে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁদের যাতে স্কুলে পাঠানো হয়, সেজন্য চিঠি দিয়েছি। প্রয়োজনে অন্য শিক্ষকদেরও আনা হোক। 

    বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার। বলেন, শিক্ষকদের দিয়ে কেরানির কাজ করানো হচ্ছে। এটা শিক্ষক সমাজেরই লজ্জা। আসলে চেয়ারম্যান সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই কাজ করছেন।  জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)