‘স্যার, এক চুটকি পুরিয়া হবে?’ মাদকাসক্ত ধরে ফ্যাসাদে পুলিস
বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: গভীর রাত। শিলিগুড়ি থানায় পুলিস কর্মীরা সকলে নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। টহলদারি ভ্যান থেকে ওয়্যারলেসে কোনও মেসেজ আসছে কি না, তা নিয়েই তটস্থ পুলিস কর্মীরা। চারিদিকে পিন ড্রপ সাইলেন্স। এরই মাঝে আচমকা থানার লকআপ থেকে কাতর স্বরে আর্তনাদ, ‘স্যার! আর পারছি না। এক চুটকি পুরিয়া হবে।’ পুরিয়া মানে ব্রাউন সুগার। রীতিমতো চমকে উঠে লকআপের দিকে তাকাতেই দেখা যায় চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত এক মাদকাসক্ত এই দাবি করছে। তাকে ধমকে চুপ করানোর চেষ্টা করেও লাভের লাভ হল না। কিছুক্ষণ পর পরই একই দাবি- আর পারছি না, মরে যাব। কিছু করুন। ‘পুরিয়া’ না পেয়ে পেট চেপে ধরে কুঁজো হয়ে বসে কান্নাকাটি।
শুধুমাত্র শিলিগুড়ি থানা নয়, শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেটের প্রতিটি থানা এলাকাতেই মাদকাসক্ত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে এই ধরনের অদ্ভুত অদ্ভুত আবদারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে পুলিস কর্মীদের। যা নিয়ে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা তাঁদের। বুঝিয়েসুঝিয়ে রাত কভার করে মাদকাসক্তদের থানা থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে যাওয়া ভ্যানে তুলে দিতে পারলেই হাঁফ ছাড়ছেন পুলিস কর্মীরা। সব মিলিয়ে এ যেন ‘শাখের করাত’ অবস্থা পুলিসের।
অপরাধ রুখতে দুষ্কৃতী ধরতে পুলিসের চলে অভিযান। যদি মাদকাসক্ত ধরা পড়ে তাহলে ‘উভয় সঙ্কট’ পুলিসের। যদিও পুলিসের শীর্ষকর্তাদের দাবি, এই সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁরা সবসময় নিয়ম মেনে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, গুরুতর অভিযোগ না থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাদকাসক্তদের দেখেও ভ্যানে তোলেন না পুলিস কর্মীরা।
শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, আমরা সাধারণত মাদকাসক্তদের গ্রেপ্তার করি না। তবে যারা অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরকেই গ্রেপ্তার করি। যদি কেউ ধৃত অবস্থায় মাদক চায়, তবে আমরা চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে থাকি।
তদন্তকারী অফিসারদেরই একাংশ জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেটের বিভিন্ন থানা এলাকায় ইদানিং মাদকাসক্তদের দাপট বেড়েছে। এরাই মূলত ছোটখাট চুরি করে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে। লিখিত অভিযোগ না হলে অনেকক্ষেত্রে থানায় এনে বসিয়ে রাখা হয়। আর থানায় তুলে আনার পর থেকে শুরু হয় এদের উৎপাত। রাত যত বাড়ে ততই মাদকাসক্তরা মাদকের দাবিতে থানা ‘মাথায়’ তোলে। কাজেই রাস্তায় মাদকাসক্ত দেখা গেলেও তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ না হলে গ্রেপ্তার করা হয় না। থানায় নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজনে রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।