এবার প্রশাসনিক ভবনে তল্লাশি লালবাজারের, নথি বাজেয়াপ্ত
বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্ত করতে এবার লালবাজারের গোয়েন্দারা গোল্ডেন জুবলি বিল্ডিংয়ে তল্লাশি চালালেন। গোল্ডেন জুবলি বিল্ডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। মঙ্গলবার বিকেলে গোয়েন্দারা আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত ভক্ত মণ্ডলকে নিয়ে আসেন। তাঁরা তার কাছ থেকে বেশকিছু নথি সংগ্রহ করেন। এই বিল্ডিংয়ে সে সেগুলি রেখেছিল। সেখানে বসিয়েও ভক্তকে বেশ কিছুক্ষণ জেরা করা হয়। অর্থবিভাগে কী কাজ করত, সেসব সে দেখিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে প্রশাসনিক ভবনে থাকার পর রাতের দিকে গোয়েন্দারা ভক্তকে নিয়ে লালবাজারে ফিরে যান।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থ তছরুপের ঘটনায় ভক্ত আরও কয়েকজনের নাম জানিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রভাবশালী রয়েছে। সিটের আধিকারিকরা তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে বাকিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিক্সড ডিপোজিটের নথি ভক্ত মণ্ডলের কাছে ছিল। নিয়ম অনুযায়ী সেটি আলমারিতে সুরক্ষিতভাবে রাখা হয়। সেখান থেকে সেই নথি ভক্ত একার সিদ্ধান্তে বের করেছিল, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও বড় মাথা রয়েছে, সেটাও আধিকারিকরা খোঁজ নিয়ে দেখছেন। বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ছাড়া এতবড় দুর্নীতি হতে পারে না বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা বিভিন্ন জনের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। বেশিরভাগ টাকা জেলার বাইরের ব্যাঙ্ক থেকে তোলা হয়েছিল। তারা কেউ নদীয়া, কলকাতা বা দিল্লিতে থাকলেও বর্ধমানের সঙ্গে তাদের যোগ রয়েছে। কয়েকজনের সঙ্গে প্রভাবশালীদেরও সুসম্পর্ক রয়েছে। সিট সেই সমস্ত অ্যাকাউন্ট মালিকদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করায় জোর দিয়েছে। ভক্তর বাড়ি খণ্ডঘোষের মাসিলা গ্রামে। সেখান থেকে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি গোয়েন্দারা সংগ্রহ করেছেন। আধিকারিকরা মনে করছেন, ভক্তর নেতৃত্বে ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। সেই সময় থেকেই সে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। ভক্ত জেরায় জানিয়েছে, অনেকের কাছেই তার দেনা রয়েছে। টাকা জোগাড় করার জন্য সে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালায়। কিন্তু কোনওভাবেই টাকা জোগাড় করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপের ছক কষে। দু’বছর আগে সে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দু’কোটি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেয়। সেই সময় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি টের পায়নি। পরে ফের একটি ফিক্সড ডিপোজিট থেকে সে টাকা তোলার চেষ্টা করে। এক কর্মীকে দিয়ে সে ব্যাঙ্কে নথি পাঠায়। সেই টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করার জন্য বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করতে বলায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপরই চক্রের পর্দাফাঁস হয়। লালবাজারের গোয়েন্দারা ব্যাঙ্কে নথি নিয়ে যাওয়া ওই কর্মীকেও জেরা করেছেন। তার কাছে থেকেও গোয়েন্দারা ভক্তর নাম জানতে পারেন। তারপরই গুজরাত থেকে গোয়েন্দারা তাকে পাকড়াও করেন।-নিজস্ব চিত্র