অভিষেকের বিশেষ নজরে নন্দীগ্রাম, সমবায় সমিতিতে নিরঙ্কুশ জয় তৃণমূলের
বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক বৈঠকে নন্দীগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরই বুধবার সেখানকার সমবায় সমিতিতে বিপুল জয় পেল তৃণমূল। এদিন গড়চক্রবেড়্যা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে ১২টির মধ্যে সবকটি আসনে জয়ী হল তৃণমূল। নিজেদের বিধানসভায় খাতা খুলতে ব্যর্থ বিজেপি। গণনা শেষে শাসকদলের নেতাকর্মীরা জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে সবুজ আবির খেলে বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠেন। বিজেপির কর্মীরা চুপচাপ গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান। ২৪আগস্ট নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া সমবায় সমিতির ভোটে জেতার পর বিজেপি লোকজন মিছিল করে শাসকদলের ক্যাম্পে চড়াও হয়েছিল। বুধবার গড়চক্রবেড়্যায় তৃণমূল জেতার পর কোনওরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বুধবার ৭ নম্বর জালপাই গড়চক্রবেড়্যা অম্বিকা গোলাপস্মৃতি বিদ্যাপীঠে ওই সমবায় সমিতির নির্বাচন ছিল। গড়চক্রবেড়্যা সমবায়ে মোট ১২টি আসন। গড়চক্রবেড়্যা, জালপাই, যাদুবাড়িচক ও নাকচিরাচর চারটি এলাকার ৬৭৭ জন ওই সমবায় সমিতির সদস্য। মনোনয়ন পর্বে বিজেপি যাদুবাড়িচক থেকে কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। তারা মোট ১১ জন প্রার্থী দিয়েছিল। তারপর মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন বিজেপির একজন লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। এভাবে যাদুবাড়িচক ও নাকচিরাচর এলাকার দু’টি আসন থেকে আগেই তৃণমূলের দু’জন জয়ী হয়েছিলেন। বুধবার মোট আটটি আসনে লড়াই ছিল। গড়চক্রবেড়্যা ও জালপাই মৌজার সদস্যরা ভোট দেন।
সমবায়ে জয়ের লক্ষ্যে দুই শিবির ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলের পক্ষ থেকে ক্যাম্প করা হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্পে দলের ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ, শেখ আব্দুল আলিম আলরাজি সহ অন্যান্য নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। বিজেপি ক্যাম্পে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল সাউ, জয়দেব দাস প্রমুখ ছিলেন। দুপুরে আহারের পর ভোট গণনা শুরু হয়। বিজেপি প্রার্থীরা কোনও লড়াই দিতে পারেননি। কারণ, তৃণমূল প্রার্থীদের থেকে তাঁদের ভোটের ব্যবধানে বিরাট। একেবারে জামানত জব্দ হওয়ার মতো অবস্থা। ভোটের ফল ঘোষণার পরই মেঘনাদবাবুরা এলাকা ছাড়েন। জালপাই মৌজায় তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান শেখ সইয়ুম কাজি ১৮৫ ভোট পেয়েছেন। তাঁর বিপক্ষ প্রার্থী বিজেপির প্রকাশ মহাপাত্রের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ৩১টি। জালপাই মৌজায় তৃণমূলের ভূধরচন্দ্র দাস পেয়েছেন ২০১। তাঁর বিপরীতে বিজেপির দিবাকর দাসের প্রাপ্ত ভোট ২৮টি। ন’টি আসনেই ফলাফল এরকম। দুই দলের ভোটের মার্জিন অনেকটাই। গড়চক্রবেড়্যা সমবায় সমিতির কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে পড়ে। কয়েকদিন আগেও ওই পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কালীচরণপুর সমবায়ে বিজেপি ১২-০ মার্জিনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু, এদিন অসহায় আত্মসমর্পণ করল। ভোটে জেতার পরই জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বিজয়োৎসবে মেতে ওঠেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। গলায় মালা পরিয়ে, সবুজ আবির মাখিয়ে উল্লাসে ভাসেন দলের কর্মীরা। এদিনের জয় নন্দীগ্রামের তৃণমূল কর্মীদের আত্মবিশ্বাসকে অনেকটাই বাড়িয়ে তুলল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ আব্দুল আলিম আলরাজি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে বাংলায় যে উন্নয়ন চলছে সেই ধারা অক্ষুণ্ণ থাকবে। নন্দীগ্রামের এই সমবায় সমিতির ফল থেকে বিজয় সূচনা শুরু হল। ২০২৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সেইসঙ্গে বাংলা বিদ্বেষী বিজেপির পতন নিশ্চিত। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ওই সমবায় সমিতির মোট সদস্যের অর্ধেকের বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। আমরা তাঁদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছতে পারিনি। যে কারণে তৃণমূল ওই সমবায়ে জয় পেয়েছে।