সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: সামশেরগঞ্জের গ্রামীণ এলাকার পর এবার ধুলিয়ানেও গঙ্গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ধুলিয়ান পুরসভার ১৮নম্বর ওয়ার্ডের লালপুরে ভাঙন শুরু হয়। তার জেরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। কয়েক মিটার এলাকা নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এলাকার মানুষজন। নদীর পাড়ে ভিড় জমান শতাধিক গ্রামবাসী। তাঁরাই তড়িঘড়ি বাঁশ ও বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের মরিয়া চেষ্টা করেন। যদিও রাতে আর তেমন ভাঙন না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পান এলাকার বাসিন্দারা। তবে রাতে বহু মানুষ চোখের পাতা এক করতে পারেননি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ধুলিয়ান পুরসভার চেয়ারম্যান ইনজামুল ইসলাম। গ্রামবাসীদের সঙ্গে তিনিও ভাঙন রোধের কাজে হাত বাড়ান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীঘ্রই ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে আশ্বাস দেন। চেয়ারম্যান বলেন, লালপুরে কিছুটা চর এলাকা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীরাই বাঁশ ও বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করেন। জলস্তর কমলে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে।
সামশেরগঞ্জ ব্লকের বিডিও সুজিতচন্দ্র লোধ বলেন, ভাঙনের বিষয়টি শুনেছি। পুরসভা কর্তৃপক্ষই এবিষয়ে ভালো বলতে পারবে। আমি এবিষয়ে খবর নেব।
জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ লালপুরে আচমকাই গঙ্গায় ভাঙন শুরু হয়। ইনটেক জেটি সংলগ্ন কয়েক মিটার চর এলাকা তলিয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে নদীর পাড় ভেঙে তলিয়ে যায়। বছর দুয়েক আগে বালির বস্তা দিয়ে এই এলাকাগুলো বাঁধানো হয়। সেই বাঁধানো এলাকাগুলোও তলিয়ে গিয়েছে। রাতেই শতাধিক গ্রামবাসী নদীর পাড়ে জমায়েত হন। গ্রামবাসীরাই বাঁশ কেটে এনে নদীর পাড়ের ভাঙন এলাকায় ফেলেন। চরের বালি বস্তায় ভরে সেখানে ফেলেন। ভাঙন এলাকা থেকে কিছুটা দূরেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা লালপুর। সেকারণে উদ্বিগ্ন এলাকার বাসিন্দারা।
এতদিন সামশেরগঞ্জের শিবপুর, ধানঘরা ও চাচণ্ড এলাকায় ভাঙন হয়েছে। বহু মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন। অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। বহু কৃষিজমি ও গাছ নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। অনেক বাড়ি এখনও নদীতে ঝুলে রয়েছে। এবার শহর এলাকায় ভাঙন শুরু হওয়ায় স্বভাবতই আতঙ্কিত শহরবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা আনসার মোমিন বলেন, প্রতিবছরই নদী শহরের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা উদ্বেগে রয়েছি। এভাবে ভাঙতে থাকতে ধুলিয়ান শহরটাই একদিন নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে। বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। পাকা ও স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের সমাধান করা হোক। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই যাতে নদীগর্ভে তলিয়ে না যায় সেজন্য প্রশাসন দ্রুত কাজ করুক। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ভোটের সময় শুধু প্রতিশ্রুতি পাই। এবার কাজ করে দেখাক প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, বিগত বছর দুয়েক আগে সামশেরগঞ্জে নিমতিতা, চাচণ্ড, প্রতাপগঞ্জ পঞ্চায়েতের একাধিক এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে দুই শতাধিক কাঁচাপাকা বাড়ি, কয়েকশো বিঘা জমি ও গাছপালা তলিয়ে যায়। বহু মানুষ এলাকায় ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। অনেকে আবার অস্থায়ীভাবে স্কুল বা অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। - নিজস্ব চিত্র