• নিউটাউনে নাবালিকা ধর্ষণ-খুনে আমৃত্যু কারাদণ্ড টোটোচালকের
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর ও বারাসত: ১৪ বছরের নাবালিকা স্কুলছাত্রীকে প্রথমে অপহরণ, তারপর ধর্ষণ ও হত্যা! নিউটাউনের ওই নারকীয় ঘটনায় সাড়ে ছ’মাসের মাথায় সাজা ঘোষণা করল বারাসত জেলা আদালত। ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে সোমবারই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল টোটোচালক সৌমিত্র রায় ওরফে রাজ। বুধবার অপরাধীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন পকসো আদালতের বিচারক সংযুক্তা সেনগুপ্ত। সেই সঙ্গে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে।

    ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৬ ফেব্রুয়ারি। বোনের সঙ্গে ঝগড়া করে সে দিন রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ওই নাবালিকা কিশোরী। জগৎপুরের কাছে গিয়ে তার রাগ ভাঙে। বাড়ি ফেরার জন্য সৌমিত্রর টোটোয় চেপেছিল সে। কিন্তু, বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বদলে ছাত্রীকে একা পেয়ে অপহরণ করে অভিযুক্ত টোটোচালক। নিউটাউনের লোহাপুলে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ এবং হত্যা করে। ৭ ফেব্রুয়ারি লোহাপুলের কাছ থেকেই উদ্ধার হয় ওই নাবালিকার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসল অপরাধীকে চিহ্নিত করে পুলিস। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় সৌমিত্রকে।

    ঘটনার ১৮ দিনের মাথায় আদালতে ধৃতের নামে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী অফিসার সৈকত ভট্টাচার্য। অপহরণ, ধর্ষণ, খুন, পকসো সহ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মে মাসে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গত সোমবারই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল সৌমিত্রকে। এই মামলায় মোট ৩৯ জন সাক্ষী ছিলেন। তার মধ্যে চারজন চিকিৎসক, তিনজন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার, টেলিকমের দু’জনও ছিলেন। নাবালিকার পোশাকে মিলেছিল সৌমিত্রর বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স। এমনকী ধৃত টোটোচালকের নখের ভিতরে নির্যাতিতার শরীরের চামড়া পাওয়া যায়। ফরেন্সিক ও মেডিক্যাল রিপোর্টই তার প্রমাণ।

    এদিন সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ৬ পকসো অ্যাক্টে আসামীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে ৫ বছরের জেল। ১০৩ (১) ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায় আরও পাঁচবছরের জেল। ৬৫(১) ধারায় ২০ বছরের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে পাঁচ বছরের জেল। সবমিলিয়ে মোট দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা হয়েছে।

    রায় ঘোষণার পর কিছুটা হলেও স্বস্তিতে নির্যাতিতার পরিবার। নাবালিকার মামা বলেন, ‘আমরা ফাঁসি চেয়েছিলাম। আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়ায় কিছুটা হলেও শান্তি।’ নাবালিকার দাদা বলেন, ‘এমন নির্লজ্জ মানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনও অধিকারই নেই। ফাঁসি হলেই বোনের আত্মা শান্তি পেত।’
  • Link to this news (বর্তমান)