• ১১ বছর দমদম জেলে, নাগরিকত্বই অস্বীকার পাকিস্তানের
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু , কলকাতা: সাজার মেয়াদ শেষের পরেও, ১১ বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি এক পাকিস্তানি নাগরিক! এখন ওই ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলছে শাহবাজ শরিফের দেশ। হাজার চেষ্টা করা হলেও, নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে করাচির বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে দেশে ফেরাতে অস্বীকার করছে ইসলামাবাদ। এই অবস্থায় শেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ৭৮ বছর বয়সি পাকিস্তানি নাগরিক পি ইউসুফ। এই পরিস্থিতিতে ওই ব্যক্তির ‘ভবিষ্যত’ কী হবে, তা নিয়ে আপাতত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জবাব তলব করেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। 

    ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি বনগাঁ সীমান্ত এলাকা থেকে ধরা পড়ে ইউসুফ। তাঁর সঙ্গে আরও দুই পাকিস্তানি ধরা পড়েছিল। ১৪-এ ফরেনার্স অ্যাক্টে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ওই তিন জনের ৬৫০ দিনের সাজা ঘোষণা হয়। তারপর থেকেই দমদম সেন্ট্রাল জেলে ঠাঁই হয় তাঁদের। প্রথমে নিজেকে ভারতীয় হিসাবে প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন ইউসুফ। দাবি করেছিলেন, তিনি কেরলের কান্নুর এলাকার বাসিন্দা। সেখানে জমি বক্রির একটি নথিও সে পেশ করেছিল। যার ভিত্তিতে কান্নুর পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজ্য পুলিস। তদন্তে নামে কান্নুর পুলিস। পরে রাজ্যকে কান্নুর পুলিস রিপোর্ট দিয়ে জানায়, একসময়ে এখানেই ইউসুফের বাড়ি ছিল। পরবর্তীতে বাবা মীর মহম্মদের সঙ্গে পাকিস্তানের করাচির লাসি এলাকায় চলে যায় ইউসুফ। রাজ্যের তরফে বনগাঁ অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারকের এজলাসে কেরল পুলিসের পাঠানো ওই রিপোর্ট পেশ করা হলে, প্রমাণ হয়ে যায় পি ইউসুফ পাকিস্তানি নাগরিক। ইউসুফও নিজেকে পাকিস্তানি নাগরিক বলে স্বীকার করে নেয়। 

    এরপর আইন অনুযায়ী তার ৬৫০ দিনের সাজা ঘোষণা হয়। এরপর দমদম সেন্ট্রাল জেলে ঠাঁই হয় তার। সাজা সম্পূর্ণ করার পর ইউসুফকে পাকিস্তানে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করে রাজ্য সরকার। পাকিস্তানে পাঠানোর জন্য দমদম জেল থেকে প্রথমে তাকে তিহার জেলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় পাকিস্তান দূতাবাসে। কিন্তু সমস্যা হল ইউসুফকে পাকিস্তানি নাগরিক হিসাবে মানতে নারাজ ইসলামাবাদ। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, ওই ব্যক্তি তাদের দেশের নাগরিক নন। অথচ ইউসুফের সঙ্গে ধরা পড়া আরও দুই ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে নিতে কোনও বাধ সাধেনি  পাকিস্তানি দূতাবাস। এরপর আরও একবার রাজ্যের তরফে ইউসুফকে পাকিস্তানে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনড় শাহবাজ সরকার।  

    বুধবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে যাবতীয় বৃত্তান্ত তুলে ধরেন রাজ্যের আইনজীবী। যা শোনার পর এবার ওই ব্যক্তির ‘ভবিষ্যত’ কী হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চান বিচারপতি সিনহা। এই ব্যক্তিকে ‘উদ্বাস্তু বা রিফিউজি’ হিসাবে গন্য করা যাবে কি না, কেন্দ্রকে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিনহা। সেইসঙ্গে মামলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসকে মামলায় পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিনহা। ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। 
  • Link to this news (বর্তমান)