মহিলাকে ন্যাড়া করে খুঁটিতে বেঁধে মারধর শ্বাশুড়ি-প্রতিবেশীদের! ত্রিপুরায় চরম নৃশংসতা
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শাশুড়ি-বউমা বিবাদ। তার পরিণতি হল ভয়ঙ্কর। ঘটনা ত্রিপুরার গোমতী জেলার উদয়পুর এলাকার। শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করার অভিযোগে প্রতিবেশীরা বউমার উপর প্রথমে শারীরিক হামলা চালায়, পরে তাঁকে খুঁটিতে বেঁধে মারধর এবং চুল কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশ। একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর তিন মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বউমাকে, শাশুড়ি ও তাঁর প্রতিবেশীদের মারধরের নৃশংসতা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড়। শুক্রবার তোলা একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে যে- একজন মহিলার হাত পিছনে বাঁধা, তাঁর মাথা প্রায় নর্দমায় লাগিয়ে রাখা হয়েছে। একজন মহিলা যখন বউমার মাথা কামাচ্ছেন তখন তাঁকে চিৎকার করতে শোনা যাচ্ছে। কয়েকজন ছেলে-সহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দাকে এই ঘটনা দেখতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই আবার ভিডিও করছেন। অভিযোগ করা হচ্ছে যে, নির্যাতিতা মহিলা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত।
নির্যাতিতার অভিযোগ, শাশুড়ি তাঁর সঙ্গে ক্রমাগত ঝগড়া করেন। তাই, স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর হাত বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বেঁধে, নর্দমায় মুখ ঘষিয়ে কালো করে দেন। এরপর ন্যাড়া করে তাঁর গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে দেন। তিনি এলাকার বেশ কয়েকজন মহিলাকে এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন এবং ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। ধৃতদের কথায়, নির্যাতিতার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে।
বিজেপি জেলা সভাপতি সবিতা নাগ সোমবার পুলিশ সুপার ড. কিরণ কুমার কে-এর সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। সবিতা সাংবাদিকদের বলেন, "ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী কোনওভাবেই এই ধরনের কাজকে প্রশ্রয় দেয় না। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ পুলিশি তদন্ত এবং আইন অনুসারে শাস্তি দাবি করেছি।" মহিলা নেত্রীর দাবি, বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস এই ঘটনায় সরকারকে বদনাম করার চেষ্টা করছে।
এই ঘটনায় জড়িত স্থানীয় বিজেপি কর্মী, অনুগামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বিজেপি জেলা সভাপতি সবিতা নাগ বলেন, "দল তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এবং দোষ প্রমাণিত হলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।"
সোমবার, জেলা পুলিশ প্রধান নিশ্চিত করেছেন যে- অন্যায়ভাবে আটকে রাখা, স্বেচ্ছায় আঘাত করা, পোশাক খুলে ফেলার উদ্দেশ্যে একজন মহিলাকে আক্রমণ করা এবং অপরাধমূলকভাবে ভয় দেখানোর মতো ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিন মহিলা - মঞ্জু রানী দাস (৬০), পুতুল রানী দাস (৫০) এবং হামিদা বানু (৬০) -কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোমতী জেলার এই নির্যাতন ত্রিপুরায় নারীদের বিরুদ্ধে গণপিটুনির আগেকার ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত ঘটনা হল, ত্রিপুরার বামফ্রন্ট শাসনকালে চন্দ্রপুর কালিবাড়ি মামলা। একজন মধ্যবয়সী মহিলাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল যে, এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বারবার এই ধরনের গণপিটুনি প্রতিরোধে শক্তিশালী আইন এবং সচেতনতামূলক অভিযানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন।