আজকাল ওয়েবডেস্ক: চলতি বছরে বর্ষণ অধিক। বাংলা-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে টানা বৃষ্টি। বন্যা পরিস্থিতি। একদিকে জম্মু ও কাশ্মীর, অন্যদিকে হিমাচল, ওড়িশা। বন্যা পরিস্থিতি রাজ্যে রাজ্যে। মানালিতে প্রবল বর্ষণ, বন্যা পরিস্থিতি বিয়াসে। ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যায় বাড়িঘর, দোকানপাট এবং একটি হোটেল ভেসে গিয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক ব্যবস্থা। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে একটি ভিডিও সামনে এসেছে ইতিমধ্যে, যদিও ওই ভিডিওর সত্যচা যাচাই করেনি আজকাল ডট ইন। তবে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, বন্যার জলের তোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সড়ক।
হিমাচল প্রদেশের মানালিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার সৃষ্টি হয় এবং বিয়াস নদী উপচে পড়ে। দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। মঙ্গলবার বিয়াস নদীর তীব্র স্রোতে মানালিতে একটি বহুতল হোটেল এবং চারটি দোকান ভেসে যায়। নদীর জলে ভেসে যায় একটি মাল বোঝাই ট্রাক।
অন্যদিকে জম্মুতে মঙ্গলবারেও জারি ভারী বৃষ্টিপাত। প্রবল বর্ষণে বিপদসীমায় বইছে সেখানকার নদীগুলি। ডোডা জেলা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিপাতজনিত দুর্ঘটনায় ডোডায় এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ি ধসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আকস্মিক বন্যায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ধারালি, কিষ্টওয়ার, কাঠুয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরে ফের মেঘভাঙা বৃষ্টি। জানা গিয়েছে, এবার ডোডা জেলাতেও মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা প্রবল জলের স্রোতে অন্তত ১০টি বাড়ি ভেসে গেছে। এখনও পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলছে এবং ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে অভিযান জারি রয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। প্রবল বৃষ্টির জেরে কাটরা-সাঙ্গার রেলস্টেশনে ভূমিধসের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে রেল পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের ভদ্রওয়া এলাকার ঐতিহাসিক শিবমন্দির ও পাণ্ডবগুহা মন্দিরেও জল ঢুকে পড়েছে। মন্দিরের পুরোহিত এবং স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রবল বৃষ্টির কারণে বৈষ্ণদেবী যাত্রা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়া ক্রমশ খারাপের দিকে যাওয়ায় কঠিন হয়ে পড়ছে উদ্ধারকাজ। জম্মু অঞ্চলের বিভিন্ন নদী ও খালে জলস্তর ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় বড় অংশে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জম্মু শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া টাউই নদী উধমপুরে বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করেছে বলে জানা গিয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জম্মুতেও জলস্তর বিপজ্জনক পরিসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। জানিয়েছে কাশ্মীরের আবহাওয়া দপ্তর। জম্মু ও কাশ্মীর সরকারও জনসাধারণকে সতর্ক করে বলেছে, বন্যা প্রবণ এলাকা ও নদীর তীরের কাছাকাছি না যাওয়ার জন্য। সরকার জানিয়েছে, আগামী ৪০ ঘণ্টায় জম্মু বিভাগের জন্য ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বর্তমানে বাসানতার, টাউই এবং চেনাব নদীর জল সতর্কতার স্তরে রয়েছে। ভারী বর্ষণ এবং চেনাব ও রবি নদীর জল বাড়তে থাকার কারণে ভারত ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে সম্ভাব্য বন্যা সম্পর্কে জানিয়েছে।
চেনাব এবং টাউই নদীর জল পাকিস্তানের দিকে যায়। যা সিন্ধু জলচুক্তির আওতায় পড়ে। এছাড়া রবি নদীর স্পিলওভার গেট থেকে পাকিস্তানের দিকে জল বইছে ক্রমশ। সাধারণত, ভারত এই তথ্য সিন্ধু চুক্তির কমিশনারদের মাধ্যমে ভাগ করত। তবে ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত চুক্তি স্থগিত রাখে। এই পরিস্থিতিতে, প্রথমবারের মতো ভারত কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে পাকিস্তানকে জল সংক্রান্ত তথ্য জানালো। ভারী বর্ষণের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে ভূমিকম্প ও ভূমিধস ঘটেছে এবং সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধসের কারণে শ্রীনগর–জম্মু জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে।
সোমবার কঠুয়া–পাঠানকোট জাতীয় সড়কের ওপর একটি বড় সেতু ভেঙে পড়ে। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। রবি নদী ও বিভিন্ন খালের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঠুয়া জেলাতেও বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃষ্টির জেরে জম্মু শহরের একাধিক এলাকা পুরোপুরি জলমগ্ন। জানিপুর, রূপ নগর, তালাব টিল্লু, জুয়েল চৌক, নিউ প্লট ও সঞ্জয় নগরে ঘরে ঘরে জল ঢুকে পড়েছে। বেশ কিছু বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়েছে, প্রায় এক ডজন গাড়ি ভেসে গেছে বন্যার জলে। আবহাওয়া দপ্তর ২৭ আগস্ট পর্যন্ত মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।