ফের রক্তাক্ত কাশ্মীর! ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে মৃত্যুমিছিল, আটকে পড়লেন বহু পর্যটক, বন্ধ রেল চলাচল
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আবারও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে তছনছ জম্মু কাশ্মীর। বন্যা পরিস্থিতির মাঝেই আবারও মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। প্রবল জলের স্রোতে ভেসে গেল পররপর বাড়ি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুমিছিল ক্রমেই বাড়ছে। আহত বহু। আবারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হল জম্মু ও কাশ্মীর।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ধারালি, কিষ্টওয়ার, কাঠুয়ার পর মঙ্গলবার ডোডা জেলায় মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে কমপক্ষে দশটি বাড়ি। এখনও পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে বন্যায় ভেসে গিয়ে এবং বাকি দুজনের মৃত্যু হয়েছে ধসে চাপা পড়ে। নিখোঁজ রয়েছেন বহু স্থানীয় বাসিন্দা। উদ্ধারকাজ চলছে এবং ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে অভিযান জারি রয়েছে।
প্রবল বৃষ্টির জেরে কাটরা-সাঙ্গার রেলস্টেশনে ভূমিধসের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে রেল পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের ভদ্রওয়া এলাকার ঐতিহাসিক শিবমন্দির ও পাণ্ডবগুহা মন্দিরেও জল ঢুকে পড়েছে। মন্দিরের পুরোহিত এবং স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভয়াবহ দুর্যোগের জেরে সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে বৈষ্ণদেবী যাত্রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়া ক্রমশ খারাপের দিকে যাওয়ায় কঠিন হয়ে পড়ছে উদ্ধারকাজ। জম্মু অঞ্চলের বিভিন্ন নদী ও খালে জলস্তর ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় বড় অংশে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জম্মু শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া টাউই নদী উধমপুরে বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করেছে বলে জানা গিয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জম্মুতেও জলস্তর বিপজ্জনক পরিসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে মৌসম ভবন জানিয়েছে, মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জারি রয়েছে সতর্কতাও। আগামী ৪০ ঘণ্টায় জম্মু বিভাগের জন্য ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বর্তমানে বাসানতার, টাউই এবং চেনাব নদীর জল সতর্কতার স্তরে রয়েছে। ভারী বর্ষণ এবং চেনাব ও রবি নদীর জল বাড়তে থাকার কারণে ভারত ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে সম্ভাব্য বন্যা সম্পর্কে জানিয়েছে।
ভারী বর্ষণের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে ভূমিকম্প ও ভূমিধস ঘটেছে এবং সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধসের কারণে শ্রীনগর–জম্মু জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার কঠুয়া–পাঠানকোট জাতীয় সড়কের ওপর একটি বড় সেতু ভেঙে পড়ে। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। রবি নদী ও বিভিন্ন খালের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঠুয়া জেলাতেও বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃষ্টির জেরে জম্মু শহরের একাধিক এলাকা পুরোপুরি জলমগ্ন।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই মেঘভাঙা বৃষ্টির পর মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে কিশ্তওয়াড়ে। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি-বন্যায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৬০ জনের। তার মাঝেই ফের ভয়াবহ পরিস্তিতি জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ায়। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, বন্যায় এখনও পর্যন্ত ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। আহত বহু। সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ছয়জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে কাঠুয়ার রাজবাগ এলাকার ঘাটি এবং আরও একাধিক গ্রামে প্রবল মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। একটি গ্রাম সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।