সোনা, টাকা নয়, যৌতুক হিসেবে বন্দুক দিন মেয়েদের, পণের কাণ্ডের পর পঞ্চায়েত প্রধানের নির্দেশ! তোলপাড় যোগীরাজ্য
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গ্রেটার নয়ডা পণ কাণ্ডে নিকির ভয়ঙ্কর পরিণতির জেরে উত্তরপ্রদেশে আতঙ্কের ছায়া। পণের জন্য নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগ স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই নিকির স্বামী বিপিন ও তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতেই নানা জায়গায় বৈঠক বসেছে। অনেকেই একমত হয়েছেন, মেয়েদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সকলকেই সমানভাবে নিতে হবে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পণ কাণ্ডে নিকির মৃত্যুর পর বাঘপাত জেলার মীতালি গ্রামে ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকেরা বৈঠক ডাকেন। যার নাম ছিল 'কেশরিয়া মহাপঞ্চায়েত'। যেখানে গ্রামের প্রতিনিধিরা ছাড়াও সাধারণ বাসিন্দারাও উপস্থিত ছিলেন। পণ কাণ্ডের বিরুদ্ধে সকলেই প্রতিবাদে সরব। পাশাপাশি বিয়ের পর মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করা হয় ওই বৈঠকে।
এই বৈঠকেই অল ইন্ডিয়া ক্ষত্রিয় মহাসভার প্রেসিডেন্ট ঠাকুর কুনওয়ার অজয় প্রতাপ সিং বলেন, 'আমরা আমাদের মেয়েদের বিয়েতে পণ হোক বা কন্যাদানের সময় সোনা, রুপো, নগদ টাকা দেওয়ার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ধারালো অস্ত্র, বন্দুক তাদের হাতে তুলে দেওয়া। যদি বন্দুক দেওয়ার সামর্থ্য কারও না থাকে, তাহলে ছুরি তুলে দিন।'
এমনকী পণের বিরুদ্ধেও সরব হন অজয় প্রতাপ সিং। তাঁর মতে, পণের জন্য মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে নিরাপদ তো থাকেই না, বরং তাদের আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, 'আমরা আমাদের পুরনো ঐতিহ্য, রীতি ভুলে যাচ্ছি। আমাদের মেয়েদের বিয়ের সময় পণ হিসেবে সোনা, রুপোর, নগদ টাকা দিই। সেই সোনার গয়না পরে মেয়েরা বাজারে যায়, কেউ না কেউ সেটি চুরি করে নেবেই। তাই বিয়েতে সোনা, রুপোর বাদ দিয়ে বন্দুক, তলোয়ার হাতে তুলে দিন। আপনার সংসারে মেয়ে থাকলে, বিয়ের পরেও তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হবে আপনাকেই।'
বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা এবং অন্যান্য সদস্যরাও অজয় প্রতাপ সিংয়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। অনেকেই সোচ্চারে বলে ওঠেন, এবার থেকে বিয়ের সময় মেয়েদের হাতে বন্দুক তুলে দেবেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার পণের দাবিতে গ্রেটার নয়ডায় নিকিকে জ্বালিয়ে দেন স্বামী বিপিন ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর একই অনুষ্ঠানে নিকি এবং কাঞ্চন ভাই বিপিন এবং রোহিতকে বিয়ে করেন। কাঞ্চনের অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিকিকে তাঁর স্বামী এবং শাশুড়ি দয়া আক্রমণ করে। কাঞ্চন বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। বিপিন নিকির উপর দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কাঞ্চনের রেকর্ড করা মর্মান্তিক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে যে বিপিন নিকিকে আক্রমণ করছে। আরও একটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে জ্বলন্ত নিকি হোঁচট খাচ্ছেন সিঁড়ি দিয়ে। তাঁকে দ্রুত নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাঁকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। কাঞ্চন বলেন যে তিনি অভিযুক্তদের বলতে শুনেছেন, “ওকে মেরে ফেলো, শেষ করে দাও।”
নিকি এবং বিপিনের একটি ছয় বছরের ছেলে আছে। সে তার মায়ের উপর হওয়া নির্যাতন এবং মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেছে। নিকি মারা যাওয়ার পর কাঁপতে থাকা ছেলেটি বলে, “তারা প্রথমে মায়ের উপর কিছু একটা চাপিয়ে দেয়। তারপর তাকে থাপ্পড় মারে এবং তারপর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।”
নিকির দিদি কাঞ্চন ও বাবা জানিয়েছেন, বিয়ের সময় স্করপিও এসইউভি, রোয়াল এনফিল্ড বাইক, নগদ টাকা এবং সোনার গয়না পণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও মন ভরেনি বিপিন ও তাঁর পরিবারের। আরও ৩৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। সেই টাকা না পাওয়া জীবন্ত অবস্থায় নিকিকে জ্বালিয়ে দেন। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় শনিবারেই বিপিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরিবারের বাকি সদস্যদের রবিবার গ্রেপ্তার করে তারা।