• সাহায্য না পেয়ে ভিক্ষা করল দুই ভাই! রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াল বাবার মৃতদেহ নিয়ে, সত্য ঘটনায় চোখে জল আসবে
    আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  •  

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। মহারাজগঞ্জ জেলার এই হৃদয়বিদারক ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। একটি ছবি সামনে এসেছে যেখানে দুই ভাই তাঁদের বাবার মৃতদেহ একটি ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে রাস্তায় কাতর আবেদনে সাহায্য চাইছে। খবর অনুযায়ী, এই দুই তরুণের জীবনে এক অসহায় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে তাঁদের বাবা দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা যান। মা আগেই তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এমনকী এরপর আত্মীয়স্বজনরা সাহায্যের হাত বাড়াতে অস্বীকার করে। 

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণের বয়স ১৪ বছর। বাবার মৃত্যুর পর রাজবীর তাঁর বাবার মৃতদেহ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার। তার এহেন আশায় কেউ না কেউ হয়তো সাহায্য করবেন, এমনটাই আশা ছিল তরুণের। বয়সে ছোট রাজবীর জানতো না সৎকারের নিয়মকানুন কী, আর সেটি'ই এই ঘটনায় জটিলতা বাড়ায়। প্রথমে তারা একটি শ্মশানে যায়। কিন্তু সেখানে কেউ তাদের সাহায্য করে না। এর পরিবর্তে তাদের বলা হয়- সৎকার করতে হলে কাঠ জোগাড় করতে হবে। হতাশ হয়ে তারা পরে একটি মুসলিম কবরস্থানে যায়। কিন্তু সেখানেও জানিয়ে দেওয়া হয় যে তারা হিন্দু, এবং হিন্দু রীতি অনুযায়ী শ্মশানেই সৎকার করতে হবে।

    এরপর রাজবীর কাঁদতে কাঁদতে বলে, 'সবাই এসে দেখলো, কিন্তু কেউ সাহায্য করলো না। পরদিন আমরা সাহস করে মৃত বাবার দেহ নিয়ে ঘাটে যাই, কিন্তু সেখানেও বলা হয় এখানে দেহ পোড়ানো হয় না। তারপর আমাদের মুসলিম কবরস্থানে যেতে বলা হয়। কিন্তু সেখান থেকেও আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।'

    এরপর নিরুপায় হয়ে দুই ভাই রাস্তায় থেমে যায়। তারা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করে যাতে কাঠ কিনে বাবার মৃতদেহ সৎকার করতে পারে। এই দৃশ্য কল্পনায় যতটা কষ্টদায়ক, বাস্তবে আরও নির্মম ছিল। শত শত মানুষ পাশ দিয়ে গেলেও কেউ ফিরেও তাকায়নি। খবর অনুযায়ী, ঠিক সেই সময় দুই অজানা ব্যক্তি সামনে এসে দাড়ান।

    ওই দুই অজ্ঞাত ব্যক্তি রাসিদ এবং ওয়ারিস কুরেশি নামে, তাঁরা শিশুদের দুরবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন। অতঃপর ধর্মের ভেদাভেদ না করে তাঁরা পুরো বিষয়টি নিজের দায়িত্বে নেন। শুধু অর্থ সাহায্যই নয়, তাঁরা মৃতদেহ সৎকারের যাবতীয় প্রক্রিয়ায় তরুণ দুই ভাইকে সাহায্য করেন। রাসিদ কুরেশি জানান, 'আমি ফোনে জানতে পারি কিছু শিশু এবং মহিলা মৃতদেহ নিয়ে সাহায্য চাইছে, কিন্তু সবাই তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। দেহটা ফুলে গিয়েছিল, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। কেউ কাছে যেতে চাইছিল না।'

    জানা গিয়েছে, এই দুই ব্যক্তির সহানুভূতি ও মানবতায় শেষ পর্যন্ত ওই তরুণ দুই ভাই তাদের বাবার মর্যাদাপূর্ণ শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। সমাজের যখন একাংশ মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন অপর একাংশ দেখিয়ে দেয়, মানবতা এখনও বেঁচে আছে।
  • Link to this news (আজকাল)