আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি: ‘মনে আছে মোদিজি লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বলেছিলেন, দেশবাসী সাবধান হয়ে যাও। কংগ্রেস আপকা ভেস (মোষ) চুরা লেগি। আজ খোদ মোদিজিই ভোট চুরি করছেন।’ বিহারে ভোটার অধিকার যাত্রায় যোগ দিয়ে এইভাবেই নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকে নিশানা করলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। যাত্রায় অংশ নিয়ে দিনভর সোচ্চার বলেন তিনি। স্লোগান তুললেন ‘ভোট চোর, গদ্দি ছোড়’। বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে রাহুল গান্ধীর ভোটাধিকার যাত্রা কার্যত গণ আন্দোলনের রুপ নিয়েছে। গত দশদিনে দেখা গিয়েছে বিহারের রাহুল-তেজস্বীর এই যাত্রায় লোকে লোকারণ্য। মঙ্গলবার ভোটাধিকার যাত্রায় অংশ নিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাঁর সঙ্গে যাত্রায় দেখা গেল তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডিকেও।
এদিন সকালে বিহারের সুপোল থেকে মধুবনি পৌঁছায় ভোটার অধিকার যাত্রা। হুড খোলা গাড়িতে রাহুলের পাশে দেখা গিয়েছে প্রিয়ঙ্কা, তেজস্বী যাদবদের। কংগ্রেস-আরজেডি কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশের জেলা মাধেপুরা এবং সহারসা থেকেও অনেকে মিছিলে যোগ দেন। যাত্রায় অংশ নিয়ে প্রিয়াঙ্কা নিশানা করেছেন বিজেপিকে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। প্রিয়াঙ্কা দাবি করেছেন, জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলা বিজেপি, সারা দেশে ভোট চুরির ষড়যন্ত্র করছে। বিহারে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, অভিবাসন, অর্থনৈতিক সংকট সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ বিজেপি-জেডিইউ সরকার জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, সংবিধান প্রত্যেক ভারতীয়কে ভোটাধিকার দিয়েছে। বিহারের গরিব মানুষের ভোটাধিকার কোনওভাবেই চুরি করতে দেবেন না তারা। বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, বিজেপি জনগণের কেবল অধিকার নয়, অস্তিব মিটিয়ে দিতে চাইছে। সকলের উচিত মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে এগিয়ে আসা। ক্ষমতাচ্যুত করা। তেজস্বী বলেন, তখত বদল দো, তাজ বদল দো-বেইমানো কা রাজ বদল দো।’
বিকেলে মধুবনিতে একটি সভায় উপস্থিত হন রাহুল গান্ধী, আরজেডি প্রধান তেজস্বী যাদব। রাহুল দাবি করেন,‘অমিত শাহ বলেছেন বিজেপি সরকার ৪০-৫০ সাল ক্ষমতায় থাকবে। অমিত শাহ কি করে একথা বলতে পারেন? এখন সত্যিটা সামনে এসে গিয়েছে। অমিত শাহ এই কারণেই ওই দাবি করতে পারেন, কেননা তারা ‘ভোট চুরি’ করে।’ রাহুল দাবি করেন, বিহারে সবার মুখে মুখে ভোট চুরির কথা শোনা যাচ্ছে। এমনকি শিশুরাও বলছে, মোদি ভোট চোর। এদিকে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর পাটনায় বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ওই দিন ভোটাধিকার যাত্রা শেষ হবে।
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্ডিয়া শিবিরের শীর্ষ নেতারা ওই দিন উপস্থিত থাকবেন। তৃণমূলের তরফেও প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবে বলে জানা গিয়েছে। কাল, ২৭ আগস্ট ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন বিহারে যাবেন। ২৯ আগস্ট কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া অংশ নেবেন যাত্রায়। ৩০ আগস্ট উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব অংশ নেবেন রাহুল-তেজস্বীদের ভোটার অধিকার যাত্রায়। ১ সেপ্টেম্বরের পাটনায় সমাবেশেও তারা অংশ নেবেন বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, মধুবনিতে এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, আরজেডি নেতা মনোজ ঝা। সুরজেওয়ালা দাবি করেন, এসআইআর শুরুর আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন ২০ শতাংশ ভোটার বাদ পড়বে। এটা আগাম কী করে জানলেন তিনি? কমিশন ও শাসক দলের যোগসাজশের ফলে ৬৫ লক্ষ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। অথচ বিজেপি-জেডিইউ একটি শব্দও উচ্চারণ করছেনা।