• ‘গরীব মানুষ নিজের জন্য নয়, সন্তানের জন্য স্বপ্ন দেখে’ দরিদ্র অটোচালকের স্বীকারোক্তিতে চোখে জল নেটপাড়ার
    আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কতটা কান পাতলে তবে কান্না শোনা যায়? গরীব মানুষের কষ্টের কথা কি আমরা সত্যিই শুনতে পাই? নাকি সমাজের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আরও একটি সমাজ যা চোখের সামনে থাকলেও দেখতে পাওয়া যায় না? এমনই হাজারো প্রশ্ন তুলে দিল গুজরাটে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এক ঘটনা

    ঘটনাটির কথা সমাজমাধ্যম রেডিটে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেটিজেন। ঘটনার মূল চরিত্র গুজরাটের এক দরিদ্র অটোওয়ালা। ওই নেটিজেন মধ্যরাতে নিজের গন্তব্যে পৌঁছনর জন্য একটি অটো ধরেন। অত রাতে অন্য কোনও যাত্রী ছিল না অটোতে। দীর্ঘ যাত্রায় সময় কাটাতে তাই পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছিলেন অটোওয়ালা এবং ওই যাত্রী। এই কথোপকথন এই উঠে আসে অদূত এক তথ্য। 

    যাত্রী জানতে পারেন ওই অটোওয়ালা সারাদিন তো বটেই সারা রাতেও অটো চালানোর চেষ্টা করেন। সব মিলিয়ে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা সময় অটোতেই কাটাতে হয় তাঁকে। অটোচালকের এহেন অমানুষিক পরিশ্রমের কথা শুনে চমকে ওঠেন যাত্রী। যেখানে অন্যান্য অটো চালকরা কেবলমাত্র দিনের বেলা কিংবা শুধুমাত্র রাতের বেলা অটো চালান সেখানে কেন তিনি দিন রাত এক করে এমন পরিশ্রম করছেন? অটো চালককে প্রশ্ন করেন যাত্রী।

    তখন অটোচালক যে উত্তর দেন তাতেই চমকে ওঠেন ওই নেটিজেন। অটোচালক জানান তিনি দুই সন্তানের পিতা। তার দুই কন্যাই পড়াশোনা করে। দুই কন্যার পড়াশোনায় যাতে কখনও কোনও ঘাটতি না হয়, তাঁর জন্য যত বেশি সম্ভব টাকা উপার্জন করাই লক্ষ্য তাঁর। কারণ এই দিননাথ পরিশ্রম করেন তিনি।।

    এরপর ওই অটো চালক এমন একটি জীবন দর্শনের কথা বলেন যা শুনে চমকে ওঠেন যাত্রী। অটোচালক জানান,গরিব মানুষদের আসলে নিজেদের জন্য স্বপ্ন দেখার অধিকার থাকে না। বরং তাঁদের স্বপ্ন তৈরি হয় নিজেদের সন্তানকে ঘিরে। সন্তানরা যাতে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে তার জন্য সবরকম চেষ্টা করাই তাঁর কর্তব্য। এই লক্ষ্যেই দিনার পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি। দুই কন্যাকে যাতে তিনি কোচিং ক্লাসে পাঠাতে পারেন তার জন্য ঈশ্বরের কাছে আরো কাজ করার শক্তি চান তিনি।

    একজন সাধারণ অটোচালকের কাছ থেকে এমন জীবন দর্শনের কথা শুনে যারপরনাই অবাক হন ওই যাত্রী। পাশাপাশি দুই কন্যা সন্তানকে পড়ানোর জন্য যে অটোচালক এতটা তৎপর তাঁর জন্য গর্বও হয় তাঁর। যাত্রা শেষে ওই যাত্রী অটোওয়ালাকে ভাড়া ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু টাকা দিতে চান। প্রাথমিকভাবে টাকা নিতে অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত যাত্রীর অনুরোধে বকশিশ গ্রহন করেন ওই অটোচালক। শেষে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রার্থনা করেন, ভগবান যেন তার মঙ্গল করেন।

    এক রাতের অটো যাত্রার এই ঘটনা রেডিটে প্রকাশ পাওয়ার পরে হাজার হাজার মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ এই ঘটনার কথা তুলে ধরার জন্য ওই যাত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অসংখ্য মানুষ কুর্নিশ জানিয়েছেন দরিদ্র পিতার সংগ্রামকে।
  • Link to this news (আজকাল)