• ৫০০০ যৌনগন্ধী মেসেজ! চিকিৎসা করাতে গিয়ে মহিলা চিকিৎসকের উপর লোলুপ দৃষ্টি রোগীর! তুলকালাম যোগীরাজ্যে
    আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিকিৎসকের প্রতি অশালীন বার্তা ও হয়রানির ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের বস্তী জেলায় এমনটি ঘটেছে৷ খবর অনুযায়ী, মূল অভিযুক্ত ৪১ বছর বয়সী মহেশ তিওয়ারি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লখনউয়ের ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে (Dr RMLIMS) চিকিৎসা করানোর সময় এক মহিলা চিকিৎসককে চরম হেনস্থা করেছেন। জানা গিয়েছে, ৩২ বছর বয়সী ওই মহিলা চিকিৎসক এই ইনস্টিটিউটটির ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বর্তমানে কর্মরতা। খবর মারফত, দিনের পর দিন তিওয়ারি তাঁর প্রতি আসক্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু তিওয়ারিকে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। এরপর থেকেই শুরু হয় নারকীয় হেনস্থা।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত তিওয়ারি ওই মহিলা চিকিৎসককে চরম উত্যক্ত করা শুরু করেন। এমনকী একদিনেই প্রায় ১,০০০ বার ফোন করেন এবং ৫,০০০-এর বেশি অশ্লীল মেসেজ পাঠান মহিলা চিকিৎসককে। ঘটনার জেরে চিকিৎসক জানান, প্রথমে তিওয়ারি চিকিৎসার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বার্তা পাঠাতে শুরু করেন। কিন্তু এরপর ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। ধীরে ধীরে তাঁর মেসেজ ব্যক্তিগত দিকে এগোতে থাকে। এর পরে এটি অশ্লীল পর্যায়ে পৌঁছে যায়। জানা গিয়েছে চিকিৎসক বার্তাগুলো উপেক্ষা করলে, তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে একের পর এক ফোন ও মেসেজ পাঠাতে থাকেন।

    এ অবস্থায়, চলতি বছরের ১২ মে চিকিৎসক ‘১০৯০ উইমেন পাওয়ার লাইন’-এ তিওয়ারির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। পুলিশ তখন তিওয়ারিকে সতর্ক করে। একইসঙ্গে তাঁর বাড়িতে স্থানীয় পুলিশ মারফত পরিবারকেও বিষয়টি জানান হয়। প্রথমে কিছুদিন চুপ থাকলেও, তিওয়ারি পুনরায় তাঁর পুরাতন 'ফর্মে' ফিরে আসেন।

    চিকিৎসক জানিয়েছেন, 'আমার ফোন এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ থাকত না। মনে হচ্ছিল যেন আমি কোনও ভৌতিক সিনেমার মধ্যে বাস করছি।' জানা গিয়েছে, শুধু ভার্চুয়াল হেনস্থাতেই থেমে ছিলনা, তিওয়ারি পরে সরাসরি তাঁকে অনুসরণ করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, তিনি চিকিৎসকের ফ্ল্যাটের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতেন। চিকিৎসক জানান, প্রায়শই তাঁকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে (OPD) অনুসরণ করতেন। চিকিৎসক আরও জানান, এহেন পরিস্থিতিতে তিনি একা ফ্ল্যাটে যেতে রীতিমত ভয় পেতেন।

    ঘটনার চূড়ান্ত পর্যায় ঘটে ১৯ অগাস্ট। খবর মারফত জানা গিয়েছে, সেদিন চিকিৎসক বহির্বিভাগ থেকে ফ্ল্যাটে ফেরার পথে লিফটের সামনে তিওয়ারিকে দেখতে পান। তিনি সন্দেহ করেন, তিওয়ারির উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে আক্রমণ করা। বিপদের আশঙ্কা করে তিনি তৎক্ষণাৎ চিৎকার করতে থাকেন। চেঁচামেচিতে তিওয়ারি ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ধরে ফেলে এবং পুলিশের কাছে তুলে দেয়।

    এরপর ঘটনার প্রেক্ষিতে ২১ অগাস্ট স্থানীয় বিভূতি খণ্ড থানায় মহিলা চিকিৎসক একটি এফআইআর দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন ধারা ৭৮ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০৮ এর ৬৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

    ১০৯০ উইমেন পাওয়ার লাইনের পুলিশ সুপার বৃন্দা শুক্লা এ বিষয়ে জানান, 'এত বিপুল সংখ্যক বার্তা ও ফোন করা কোনও স্থিতিশীল মানসিকতার পরিচয় দেয় না।'

    মহিলা চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং তাঁর স্বামী তাঁর নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। 'এই ঘটনার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি এবং আমার জীবন একপ্রকার হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে,' এমনটাই জানিয়েছেন মহিলা চিকিৎসক।

    সম্প্রতি এই ঘটনার জেরে মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ফের এক বড় প্রশ্নের মুখে। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার গুরুত্ব আবারও সামনে এনেছে। বর্তমানে পুরো ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে৷ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এমনটাই আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। 
  • Link to this news (আজকাল)