টানা ১৬ ঘন্টা ডিউটির পর ঘুমের ঘোরে ট্রেন লাইনে পড়ে গেলেন নিরাপত্তারক্ষী, ভিডিও ভাইরালে ক্ষোভে ফেটে পড়ল নেটদুনিয়া
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুতে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। একজন নিরাপত্তা রক্ষীর ট্রেন লাইনে ঘুমের ঘোরে পড়ে যাওয়ার একটি ঘটনা সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বেঙ্গালুরুর ইয়েলো লাইনের রাঘিগুদ্দা মেট্রো স্টেশনে। অতিরিক্ত পরিশ্রান্ত ছিলেন তিনি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ওই নিরাপত্তা রক্ষী ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন লাইনে পড়ে যান। সৌভাগ্যবশত, ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক যাত্রীর তাৎক্ষণিক সহায়তায় তিনি গুরুতর কোনও আঘাত থেকে রক্ষা পান।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫২ বছর বয়সী ওই নিরাপত্তা রক্ষী টানা ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করে অত্যন্ত ক্লান্ত অবস্থায় ছিলেন। খবর অনুযায়ী, তাঁকে অল্প সময় বিশ্রাম দিয়ে পুনরায় কাজে ডেকে আনা হয়েছিল। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, তিনি চোখ বন্ধ করে ঘুমের মতো হাঁটছিলেন। এরপর হঠাৎ করে প্ল্যাটফর্ম নাম্বার ২ থেকে লাইনে পড়ে যান তিনি। ঘটনাটি ঘটে যখন ট্র্যাক খালি ছিল, ফলে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। এক যাত্রী দ্রুত তাঁকে উপরে তুলতে সাহায্য করেন। এরপর প্ল্যাটফর্ম নাম্বার ১-এ থাকা আরেক নিরাপত্তা কর্মী ইমারজেন্সি ট্রিপ সুইচ (ETS) চালু করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন, যাতে করে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের কোনও সম্ভাবনা না থাকে।
খবর মারফত জানা গিয়েছে, ঘটনার পর বেঙ্গালুরু মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (BMRCL) ওই নিরাপত্তা রক্ষীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করে। কীভাবে একজন কর্মীকে এত দীর্ঘ সময় ডিউটি করানো হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট স্টেশন ম্যানেজারের কাছ থেকে এই বিষয়ে জবাবদিহি চাওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই নিরাপত্তা কর্মীদের প্রতি এ ধরনের অবহেলার কড়া সমালোচনা করেন। একজন এক্স ব্যবহারকারী মন্তব্য করে লেখেন, 'নিরাপত্তা কর্মীদের কাজের সময় ৯ ঘণ্টা। তাঁদের কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বিরতি হওয়া উচিৎ। ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো অমানবিক। সরকারকে উচিৎ এমন নিয়ম বাধ্যতামূলক করা, যেখানে শুধুমাত্র ওই সব এজেন্সির সঙ্গেই চুক্তি হবে যারা সপ্তাহে একদিন ছুটি দেয় এবং পিএফ, ইএসআই সুবিধা দেয়।'
ঘটনার জেরে আরেকজন মন্তব্য করে বলেন, 'ন্যূনতম মজুরির নিচে এবং দীর্ঘ সময় কাজ করা-এটাই দেশের ৪২ কোটিরও বেশি শ্রমজীবী মানুষের বাস্তবতা। কিন্তু এসব কখনও নির্বাচনের ইস্যু হয় না।'
'১৬ ঘণ্টার ডিউটি! এখানকার অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে অন্য জায়গায় কী অবস্থা হতে পারে কল্পনাও করতে পারি না। শ্রম দপ্তর কোথায়? আদৌ কোনও আইন আছে কি না?'- এমন মন্তব্যও উঠে আসে।
এহেন ঘটনা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কী রকম অবহেলা ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন নিরাপত্তা রক্ষী ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক বহু শ্রমিককে কাজ করতে হয়। তাদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ এবং শ্রম আইনের কার্যকর প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি।