বায়ুদূষণ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র, কবে থেকে শুরু হবে এই প্রকল্প
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্র সরকার বহু প্রতীক্ষিত কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন অ্যান্ড স্টোরেজ মিশন-এর রোডম্যাপ ও ব্যয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে বলে জানিয়েছেন নীতি আয়োগের জ্বালানি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রাজনাথ রাম। তিনি বলেন, “আমরা মিশনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার কাজ করছি। মোট ব্যয় নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা চলছে।” ২৬ আগস্ট নয়াদিল্লিতে ইন্দো-আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত তৃতীয় এনার্জি সামিটে এই মন্তব্য করেন তিনি।
CCUS কী?কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন অ্যান্ড স্টোরেজ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগেই সংগ্রহ করা হয়। এই সংগৃহীত কার্বন ডাই অক্সাইড পরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। এগুলি রাসায়নিক, নির্মাণ সামগ্রী, জ্বালানি তৈরিতে অথবা স্থায়ীভাবে ভূগর্ভস্থ ভূতাত্ত্বিক স্তরে সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য হল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করা এবং নেট-জিরো নির্গমন লক্ষ্যে পৌঁছানো। ভারতের এনার্জি ট্রানজিশন ও নেট জিরো টার্গেট অর্জনে CCUS একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে চলেছে।
গ্যাস ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনারাম আরও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানি মিশ্রণে গ্যাসের পরিমাণ ১৫% করতে চাইছে। এজন্য গ্যাসের ব্যবহার ২–৩ গুণ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, “যদি আমরা এনার্জি বাস্কেটে ১৫% গ্যাস রাখতে চাই, তবে গ্যাসের ব্যবহার ১৮০–২০০ বিসিএম পৌঁছাতে হবে।”
এর জন্য প্রথমত দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশজুড়ে ভূতাত্ত্বিক ভাণ্ডারের জরিপ চালাতে হবে। যাতে আমদানি নির্ভরতা কমানো যায়। দ্বিতীয়ত, কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিত করা যায়, সেই বিষয়ে কাজ করতে হবে। তৃতীয়ত, দেশীয় পর্যায়ে ব্যাপকভাবে কমপ্রেসড বায়োগ্যাস উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে।
শিল্প মহলের মতামতগেইল-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর বি.সি. ত্রিপাঠি বলেন, ভারতে বড় আকারের গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক থাকলেও তা মাত্র ৫০–৫৫% সক্ষমতায় চলছে। তিনি জানান, পরিবহন খাত গ্যাসের অন্যতম বড় বাজার হতে পারে, যা ডিজেলের ব্যবহার ও কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে।
ONGC বিদেশ লিমিটেড-এর এমডি রাজর্ষি গুপ্ত বলেন, গ্যাস সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন নতুন ও উদ্ভাবনী মডেল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি জানান, “ONGC প্রায় পাঁচ মিলিয়ন টন LNG সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা হবে হেনরি হাব, ক্রুড-ভিত্তিক LNG এবং একাধিক উৎস থেকে সংগৃহীত।”
প্রসঙ্গত, আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এনওএএ)-র তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই ‘ক্ষতিকর’ হিসেবে চিহ্নিত সে। তাই স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক ‘গ্রিন হাউস’ গ্যাসের তালিকাতেও রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইডের নাম। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, এতদিন কার্বন ডাই অক্সাইডকে যতটা ‘দূষণকারী’ মনে করা হত আদৌ তা নয়। তাই ‘গ্রিন হাউস’ গ্যাসের তালিকা থেকে তাকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
২০০৭ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে, ‘দূষণহীন বায়ু আইন’-এর অধীনে ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ হিসেবে চিহ্নিত কার্বন ডাই অক্সাইড। ফলে ‘বাতাসের বিষ’ হিসাবে চিহ্নিত ওই গ্যাসটি। কিন্তু মাস কয়েক আগে ইপিএ ঘোষণা করেছে যে তারা কয়লা এবং গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের বর্তমান সীমারেখা বদলানোর চেষ্টা করবে। কারণ, সেই সীমারেখার অন্যতম অংশীদার কার্বন ডাই অক্সাইড। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত সংস্থার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করবে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ শিল্পগোষ্ঠীগুলির চাপেই এমন পদক্ষেপ করেছে ট্রাম্প সরকার।