বিহারে ভোটার তালিকায় একি কাণ্ড! প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ফের চাঞ্চল্য। সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বহু বাড়ির ঠিকানায় শত শত ভোটারের নাম নথিভুক্ত করা হলেও বাস্তবে সেইসব মানুষের কোনো অস্তিত্বই নেই। নির্বাচন কমিশন বুথভিত্তিক খুঁটিনাটি যাচাইয়ের দাবি করলেও প্রকৃত পরিস্থিতি তার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে।
ধানসিঁড়ি, মধুবন, কটিহার এবং পুরনিয়া—এই চারটি বিধানসভা এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালানো হয়। সেখানে দেখা যায়, অন্তত ১৪টি ঠিকানায় অস্বাভাবিক সংখ্যক ভোটার নিবন্ধিত। উদাহরণস্বরূপ, মধুবনের এক ছোট বাড়িতে ২৭৪ জন ভোটার দেখানো হয়েছে। পুরনিয়ার একটি ঠিকানায় ১৫৩ জনের নাম একসঙ্গে তালিকাভুক্ত। কটিহারে এমনকি ২০ বছর ধরে বন্ধ পড়ে থাকা একটি বাড়িতেও প্রায় ২০০ জন ভোটার নথিভুক্ত বলে পাওয়া গেছে।
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতেই রহস্য আরও স্পষ্ট হয়। যেসব নাম তালিকায় রয়েছে, তার অধিকাংশই ওই এলাকার মানুষদের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা। কোথাও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা কোনোদিন এসব ব্যক্তিকে দেখেননি। কোথাও আবার বলা হয়েছে, বছর বছর ধরে বাড়ি খালি পড়ে আছে, অথচ সেখানে শ’য়ে শ’য়ে ভোটার নিবন্ধিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে সবচেয়ে বড় দায় বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO)। ভোটার তালিকা প্রস্তুতের সময় সঠিক বাড়ি নম্বর বা পূর্ণ ঠিকানা সংগ্রহ না করে অনেক BLO শুধুমাত্র নাম ধরে নিবন্ধন করেছেন। ফলে এক ঠিকানার সঙ্গে বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম জুড়ে গেছে। একাধিক BLO নিজেরাও স্বীকার করেছেন, তারা সবসময় নির্দিষ্ট নির্দেশনা পান না। অনেকে বলেন, “আমরা নাম লিখে দিই, কিন্তু বাড়ি নম্বর সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না।”
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াও এসেছে। বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, রাজ্যের বহু গ্রামীণ ও আধাশহর এলাকায় বাড়ির নম্বর না থাকা বা সুনির্দিষ্ট ঠিকানা না পাওয়া একটি সামাজিক বাস্তবতা। তাঁর মতে, তালিকা প্রণয়নের সময় এ ধরনের সমস্যাকে পুরোপুরি এড়ানো যায় না। তবে পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এই ব্যাখ্যা মূল সমস্যার সমাধান নয়, বরং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
প্রশ্ন উঠছে, যদি স্থানীয় পর্যায়ে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা এত সহজে এই অসঙ্গতিগুলো খুঁজে পেতে পারেন, তবে নির্বাচন কমিশন কীভাবে তা চোখ এড়িয়ে গেল? গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হল স্বচ্ছ ও সঠিক ভোটার তালিকা। যদি তালিকাতেই এ ধরনের ত্রুটি থেকে যায়, তবে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, কমিশনকে অবিলম্বে নতুন করে সমীক্ষা চালাতে হবে এবং ভুলভ্রান্তি সংশোধন করতে হবে। না হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর থেকে মানুষের আস্থা আরও ক্ষয় হবে। সাধারণ মানুষের মতও একই—“ভোট যদি সঠিকভাবে না হয়, তবে গণতন্ত্রের মানে কোথায়?”
বর্তমানে বিহারের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এ ধরনের ভোটার তালিকা নিয়ে আগামী নির্বাচনে কি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হবে? নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা ফেরাতে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপের দাবিই এখন জনমানসে জোরালো হয়ে উঠছে।