• দেশভাগের জন্য দায়ী কারা? কেন্দ্রের নতুন সিলেবাসে ফের বিতর্ক
    আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ (NCERT) সম্প্রতি প্রকাশ করা ‘Partition Horrors Remembrance Day’ বিষয়ক বিশেষ মডিউলে বিভাজন-সংক্রান্ত 'দায়ী' হিসেবে মহম্মদ আলী জিন্নাহ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও লর্ড মাউন্টব্যাটনকে চিহ্নিত করেছে, যা চালু হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক ও একাডেমিক স্তরে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। 

    মডিউলের মূল বক্তব্যগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে—“জিন্নাহ ছিল বিভাজনের দাবি নেবে; কংগ্রেস তা মেনে নেয়; মাউন্টব্যাটন তা বাস্তবায়ন করে” — এবং পাঠ্যপুস্তকীয় কাজে এটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সহায়ক সরঞ্জাম হিসেবে ছাড়াও পাঠানো হয়েছে বলে NCERT-র প্রকাশনা জানায়। মডিউলে আরও বলা হয়েছে, বিভাজনের ফলে উদ্ভূত কাশ্মীর এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টি করেছে। 

    তবে ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষকরা অভিযোগ করেছেন, মডিউলটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ‘divide-and-rule’ নীতি এবং উপনিবেশিক ভূমিকা হালকা করে দেখিয়েছে বা উপেক্ষা করেছে—ফলত: স্বাধীনতা-চর্চার জটিল প্রেক্ষাপট অস্পষ্ট হচ্ছে। এমনটাই জানান বহু ইতিহাসগবেষক ও সম্পাদকীয় পর্যায়। বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যম-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ব্রিটিশ শাসনের ভূমিকা সঠিকভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন ছিল। 

    রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও তীব্র—কংগ্রেস দল মডিউলটি “ইতিহাস বিকৃতি” বলে চিহ্নিত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখিয়েছে এবং কিছু কংগ্রেস নেতারা মডিউলটি ‘ছাড়িয়ে দেওয়ার’ মত উক্তিও করেছে। অন্যদিকে শাসক দল BJP মডিউলকে সমর্থন জানিয়ে এটিকে “বিভাজনের গোপন সত্য” বলেছে। শিক্ষার্থী সংগঠন NSUI-ও দিল্লির বিভিন্ন কলেজে প্রতিবাদের আয়োজন করেছে। 

    Indian History Congress (IHC)-এর নির্বাহী সমিতি একটি রেসল্যুশন পাস করে বলেছে, মডিউলটি ইতিহাসকে খন্ডিতভাবে উপস্থাপন করছে এবং “কমিউনাল বোধ” জাগানোর আশঙ্কা তৈরি করছে; তারা যথাযথ আলোচনার অনুরোধ করেছে এবং বিতর্কে প্রামাণ্য উৎস বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। 

    পটভূমি হিসেবে বলা যেতে পারে—এই বিশেষ মডিউলগুলো নিয়মিত পাঠ্যপুস্তকের বিকল্প বা পরিপূরক হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে এবং স্কুল প্রজেক্ট, বিতর্ক ও আলোচনা-চর্চায় ব্যবহার করার জন্য সাজানো; তথাপি ইতিহাসের সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও শিক্ষাব্যবস্থায় স্বতন্ত্র মতের দ্বন্দ্ব নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে পাঠ্যবই পরিবর্তন-সংক্রান্ত আলোচনা বিগত কয়েক বছরেও চর্চার বিষয়। 

    বিশেষজ্ঞদের মতে বিতর্ক থামানোর চাবিকাঠি হবে—প্রামাণ্য সূত্রের ওপর ভিত্তি করে প্রশস্ত আলোচনা, ইতিহাসবিদদের মতামত সংগ্রহ এবং স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাসামগ্রীর স্বচ্ছ-পুনর্মূল্যায়ন। অনেকে আশা করছেন NCERT দ্রুত একটি পরিষ্কার বিবৃতি বা একাধিক উৎস-উদ্ধৃতি দিয়ে বিতর্কে স্পষ্টতা আনবে; আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা এখনও পাওয়া যায়নি।

    আরএসএস দীর্ঘদিন ধরেই ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে সমালোচিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকা ছিল প্রায় শূন্য, তবুও তারা নিজেদের দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চায়। পাঠ্যবই থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে মুসলিম শাসকদের অবদান, বাংলার নবজাগরণ বা শ্রমিক-চাষি আন্দোলনের ইতিহাসকে করা হচ্ছে গৌণ। পরিবর্তে হিন্দু রাজাদের মহিমা, পৌরাণিক কাহিনি আর ভুয়ো নায়ক তৈরির মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে একপাক্ষিক বর্ণনা। এই বিকৃতি শুধু অতীতকে বিকল করছে না, বর্তমানেও বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতি চালানোর হাতিয়ার হয়ে উঠছে। ইতিহাসকে অস্ত্র বানিয়ে তারা সাম্প্রদায়িক ভারত গড়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
  • Link to this news (আজকাল)