আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিবাহবিচ্ছেদের এক মামলায় নড়েচড়ে উঠল আদালত। তেলেঙ্গানা হাইকোর্ট এক মহিলার বিবাহবিচ্ছেদ ও ৯০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি খারিজ করে দিয়েছে। মামলাকারী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর স্বামী রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়ে যৌন অক্ষমতায় ভুগছেন এবং এই বিষয়টি বিবাহের আগে গোপন করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে, এর ফলে সংসার অশান্ত হয়, বিবাহিত জীবন ভেঙে যায় এবং এটি নিষ্ঠুরতার ও প্রতারণার শামিল। তবে আদালত বলেন, এসব অভিযোগ প্রমাণ করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়নি।
মামলার অভিযোগ ও স্ত্রীর দাবি
২০১৩ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। স্ত্রী আদালতে অভিযোগ করেন, স্বামী বিবাহের আগে তাঁর অসুস্থতার কথা গোপন করেছিলেন এবং বিয়ের পর দাম্পত্য জীবন স্বাভাবিক হয়নি। তিনি জানান, কেরালা ও কাশ্মীরে মধুচন্দ্রিমার সময়ও সম্পর্ক সম্পূর্ণ হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই স্ত্রীকে প্রাথমিকভাবে উত্তেজিত করেই ক্ষান্ত হয়ে যান তিনি। ২০১৭ সালে এক পর্যায়ে চিকিৎসক স্বামীর যৌন অক্ষমতার প্রমাণ দেন বলে দাবি করেন তিনি। স্বামীর অসুস্থতার কারণে তিনি মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং এজন্য ৯০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
অন্যদিকে স্বামী এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, বিয়ের পর তাঁদের একাধিকবার দাম্পত্য সম্পর্ক হয়েছে এবং সংসারও দীর্ঘদিন চলেছে। তিনি স্বীকার করেন যে, এক সময় সামান্য যৌন সমস্যায় ভুগেছিলেন, তবে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ২০২১ সালে তাঁর যৌন সক্ষমতার পরীক্ষা ও স্বাভাবিক শুক্রাণুর রিপোর্ট আদালতে জমা দেন তিনি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
ন্যায়পালিকা পর্যবেক্ষণ করে জানায়, স্ত্রীর পক্ষ থেকে যৌন অক্ষমতার অভিযোগের কোনও নিরপেক্ষ চিকিৎসা প্রমাণ বা প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। পাঁচ বছর ধরে ভারত ও আমেরিকায় একসঙ্গে সংসার করার পর হঠাৎ এধরনের অভিযোগ তোলা বিশ্বাসযোগ্য নয়। স্ত্রীর অভিযোগে অসঙ্গতি থাকার পাশাপাশি তিনি পরিবার বা কর্তৃপক্ষকেও আগে কখনো এ বিষয়ে অবগত করেননি।
বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য ও বিচারপতি বি. আর. মধ্যসুধন রাও-এর বেঞ্চ বলেন, “অভিযোক্তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে বিবাহ অক্ষমতার কারণে অকার্যকর ছিল কিংবা তিনি স্বামীর হাতে ক্রূর আচরণের শিকার হয়েছেন। অতএব বিবাহবিচ্ছেদ বা ৯০ লক্ষ টাকার স্থায়ী ভরণপোষণ দাবি করার কোনও ভিত্তি নেই।”
রায়টি দেখায় যে, বিবাহ সংক্রান্ত বিরোধে চিকিৎসাগত সমস্যা ও যৌন জীবনের অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। আদালতকে যেমন প্রমাণ ও আইনি ভিত্তির ওপর নির্ভর করতে হয়, তেমনি সমাজকেও দীর্ঘস্থায়ী বা সাময়িক অসুস্থতায় ভোগা সঙ্গীর প্রতি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন।
এ ধরনের রায়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন আদালত প্রমাণ-ভিত্তিক বিচার প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে সামনে এনেছে, তেমনি সমাজের জন্যও একটি বার্তা দিয়েছে। যৌন অক্ষমতা বা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা যে কারও জীবনেই আসতে পারে, কিন্তু তা শুধুমাত্র বিবাহিত সম্পর্ক ভাঙার একমাত্র ভিত্তি হতে পারে না, যদি না প্রকৃত প্রমাণ থাকে। বিবাহিত জীবনে মানসিক বোঝাপড়া, আস্থা ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—এমনটাই মনে করেন সমাজবিদরা। শুধু শারীরিক ঘাটতি নয়, বরং পারস্পরিক সম্মান ও সমর্থনের মাধ্যমেই দাম্পত্য টিকে থাকে। তাই এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে অভিযোগ আনার আগে দম্পতিদের মধ্যে আন্তরিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তার ওপরও বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন।