• একটি ক্লাব ‘নিখোঁজ’, বাকি দু’টি জবাবে কী বলল? পুজো অনুদান নিয়ে হাই কোর্টের কোপে পড়া শিলিগুড়ির তিন ক্লাবের চালচিত্র
    আনন্দবাজার | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • একটি ক্লাব ‘নিখোঁজ’! গত বছর যাঁরা টাকা নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এ বার যোগাযোগই করা যাচ্ছে না। অন্য দু’টি ক্লাবের কর্তাদের জবাবেও নানা অসঙ্গতি। সরকারের দেওয়া পুজো অনুদানের খরচের হিসাব কেন তারা জমা দেয়নি, তিনটি ক্লাবের মধ্যে কারও থেকেই তার কোনও স্পষ্ট উত্তর মিলল না।

    যে সব পুজো কমিটি গত বছরের খরচের হিসাব দেয়নি, তাদের এ বার অনুদান দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্য সরকার আদালতে জানিয়েছে, শিলিগুড়ির তিনটি ক্লাব খরচের হিসাব দেয়নি। অর্থাৎ, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওই তিন ক্লাবের এ বার অনুদান পাওয়ার কথা নয়। সাধারণত পুলিশ মারফতই পুজো কমিটিরগুলির কাছে অনুদানের অর্থ পৌঁছোয়। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, তিনটি ক্লাবের নাম— কাশ্মীর কলোনি দুর্গাপুজো কমিটি, নবজাগরণ সঙ্ঘ এবং দক্ষিণ শান্তিনগর দুর্গাপুজো কমিটি।

    তিনটি ক্লাবই এনজেপি থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) তন্ময় সরকার বলেন, ‘‘নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তার পরেও তিনটে ক্লাব অনুদানের হিসাব দেয়নি। এই তিনটি ক্লাবের নাম আমরা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।’’

    এই তিনটি পুজোকমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তাতে ‘নবজাগরণ সঙ্ঘ’ নামে ক্লাবটির কোনও খোঁজই পাওয়া যায়নি! পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাবটি উত্তরকন্যার কাছে কোথাও রয়েছে। কিন্তু স্পষ্ট ঠিকানা মেলেনি। এনজেপি থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ক্লাবের কর্তা হিসাবে যাঁর নাম পুলিশের খাতায় নথিভুক্ত রয়েছে, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনে বলছে— ইনকামিং কলের পরিষেবা নেই। আমরাও খোঁজ করার চেষ্টা করছি।’’

    কাশ্মীর কলোনির পুজোকমিটির এক কর্তার অবশ্য হদিস মিলেছে। হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও কেন তাঁরা অনুদানের হিসাব দেননি? জবাবে কোষাধ্যক্ষ রনিত রায় বলেন, ‘‘গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা হিসাব দিয়েছি। পুলিশের কাছ থেকে নোটিস এসেছিল। তার পরেই হিসাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আগে কেন দেওয়া হয়নি, তা জানি না। এমনিই দেওয়া হয়নি হয়তো।’’

    এনজেপি থানা থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কাশ্মীর কলোনি। দুর্গাপুজো হয় রেল কোয়ার্টারের চত্বরে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, দিন তিন-চারেক আগে খুঁটিপুজো হয়েছে। যদিও এ বারের মণ্ডপের কাঠামো এখনও তৈরি হয়নি। জনাচারেক মিস্ত্রিকে বাঁশ কাটতে দেখা গিয়েছে। কাশ্মীর কলোনির বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী রনিত বলছেন, ‘‘এ বার অনুদান না পেলে হয়তো পুজোই হবে না। রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, ভুল মার্জনা করে আমাদের অনুদান দেওয়া হোক।’’

    অনুদানের খরচের হিসাব জমা না-দেওয়ার স্পষ্ট কারণ দেখাতে পারেনি দক্ষিণ শান্তিনগর দুর্গাপুজো কমিটিও। ওই কমিটির সম্পাদক বললেন, ‘‘সভাপতি জানেন।’’ সভাপতি বলছেন, ‘‘সবটা জানেন কোষাধ্যক্ষ।’’ কিন্তু কোষাধ্যক্ষের হদিস মেলেনি! সম্পাদক গোপীনাথ রায় বলেন, ‘‘পুলিশকে কেন এখনও হিসাব দেওয়া হয়নি, সভাপতি বলতে পারবেন। আমি জানি না।’’ সভাপতি সুবোধচন্দ্র মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘কেন হিসাব দেওয়া হয়নি তা কোষাধ্যক্ষ বলতে পারবেন।’’

    পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কোষাধ্যক্ষের নাম কী? তাঁর ফোন নম্বরটা দেবেন?’’

    তিন-চার সেকেন্ড পরেই কেটে গেল ফোন! তার পর আর ফোন ধরেননি সুবোধ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)