ভোটার তালিকার অন্যতম মূল দায়িত্বে থাকা ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারেরা (ইআরও) সকলে মহকুমাশাসক (এসডিও) পদমর্যাদার কি না, রাজ্য সরকারের কাছে তা জানতে চাইল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ইআরও-দের প্রায় ৬০% এসডিও পদমর্যাদার আধিকারিক নন।
এর কারণ হিসেবে প্রবীণ আধিকারিকদের একাংশ জানান, যাঁরা নতুন এসডিও হওয়ার যোগ্য, তাঁদেরও প্রায় এক বছর ধরে অন্য দায়িত্বে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাই সমস্যা। ২০২২ ব্যাচের ১১ জন আইএএস আধিকারিক এ রাজ্যে কাজে যোগ দেন গত বছর সেপ্টেম্বরে। বছর ঘুরতে চললেও, এক জন বাদে বাকিরা এখনও বিভিন্ন দফতরে ওএসডি (অফিসার-অন-স্পেশাল ডিউটি) হিসেবে নিযুক্ত। যদিও ওএসডি হিসেবে কিছু দিন কাজ শেখার পরেই তাঁদের এসডিও-র ‘ফিল্ড পোস্টিং’ পাওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ২০২৩ ব্যাচের আইএএস-রাও প্রশিক্ষণ শেষে রাজ্যের কাজে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে বিভিন্ন দফতরে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন ওএসডি-দের মধ্যেও সিনিয়র-জুনিয়র ভাগ হয়ে গেছে। নদিয়ার তেহট্টের এক এসডিও ক্যাডার বদলে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়ায় ২০২২ ব্যাচের এক আইএএস-কে সেখানে এসডিও করা হয়েছে। ওই ব্যাচের বাকিরা রয়েছেন অপেক্ষাতেই।’’
প্রবীণদের একাংশ জানান, যাঁদের এসডিও পদ পাওয়ার কথা, তাঁরা সেই কাজে যোগ দিলে হাতেকলমে শেখার সুযোগ থাকে। প্রশিক্ষণ শেষে দ্রুত এই দায়িত্ব দেওয়াই রীতি। নিয়মিত তা না হলে এসডিও থেকে অতিরিক্ত জেলাশাসক (এডিএম) বা এডিএম থেকে জেলাশাসক পদে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লাগে, যা স্বাভাবিক নয়। তাঁরা এ-ও মনে করাচ্ছেন, বর্তমান প্রশাসনে চার-পাঁচ জন এমন আধিকারিক রয়েছেন, যাঁরা সচিব পদমর্যাদার হয়েও জেলাশাসকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ফলে নতুন আধিকারিকদের জেলাশাসক হওয়ার সময় ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকায় এডিএম বা এসডিও পদেও দীর্ঘসূত্রতা চলছে। ভোটের সময়ে এ সব কিছু কমিশনের বিচার্য হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়েও চর্চা রয়েছে।
পর্যবেক্ষক শিবিরের প্রশ্ন, নতুন আইএএস অফিসারদের কেন্দ্রের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ এখনও নিতে হয় বলেই কি রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে ‘মগজধোলাই’-এর আতঙ্ক রয়েছে এখনও! আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে আধিকারিকদের ‘মন’ বোঝার সময় নিচ্ছে প্রশাসন?
প্রশাসনিক সূত্রের অবশ্য দাবি, ২৩টি জেলায় ৬৯টি মহকুমা রয়েছে। ইআরও রয়েছেন একটি বিধানসভা এলাকায় এক জন করে, অর্থাৎ ২৯৪ জন। স্বাভাবিক ভাবেই সব এসডিও-কে ইআরও-র দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এসডিও বা সমতুল পদের আধিকারিকদেরও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই দায়িত্ব পান সিনিয়ররাও। এর পিছনে অন্য কোনও তত্ত্ব নেই বলেই তাঁদের দাবি।