• বিধায়কের বিরুদ্ধে ইডির অস্ত্র কি বাবা, স্ত্রীর বয়ান
    আনন্দবাজার | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় ধৃত বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে আদালত গ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণের ‘ত্রিফলায়’ বিদ্ধ করা হবে বলে দাবি ইডির।

    তদন্তকারীদের দাবি, এক দিকে দু’টি মোবাইল ফোনের নথির নানা সূত্রে ‘প্রভাবশালী-যোগ’। আর এক দিকে বিধায়কের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী, বাবা এবং দু’জন ঘনিষ্ঠ এজেন্টের লিখিত বয়ান হাতে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অর্থাৎ তিন দিক থেকেই আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণে জীবনকৃষ্ণকে ঘিরে ফেলার রাস্তা পাকা বলে দাবি তদন্তকারীদের।

    ইডির এক কর্তার কথায়, প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং আইনের ৫০ ধারায় জীবনকৃষ্ণের স্ত্রী টগর এবং বাবা বিশ্বনাথ সাহার লিখিত বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। আইনগত ভাবে ওই ধারায় লিখিত বয়ান আদালতের পর্যবেক্ষণে গোপন জবানবন্দির সমান।

    ইডির ওই কর্তার দাবি, “বেশ কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি তাঁর বাবা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন বলে, জেরায় জানিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। কিন্তু লিখিত বয়ানে জীবনকৃষ্ণের বাবা বিশ্বনাথ জানিয়েছেন, কোনও সম্পত্তি তিনি তাঁর ছেলেকে দেননি। উল্টে ছেলে তাঁর সম্পত্তি দখল করতে বেনামে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেন।” ২০২৩ সালে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী টগরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন মাসে নগদে ২৬ লক্ষ টাকা ঢোকে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। সূত্রটি বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে জীবনকৃষ্ণ জানিয়েছিলেন, শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি বিক্রির নগদ টাকা স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর স্ত্রীর লিখিত বয়ান বলছে অন্য কথা। টগর জানিয়েছেন, জীবনকৃষ্ণ সমস্ত নগদ টাকা তাঁর নামের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেন। ওই টাকার উৎসের বিষয়ে তিনি অন্ধকারে রয়েছেন। তাঁর নামের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জীবনকৃষ্ণই সামলাতেন বলে তদন্তে উঠে আসছে।

    ইডির ওই কর্তা বলছেন, জীবনকৃষ্ণের নিয়োগ দুর্নীতির নেটওয়ার্কের দুই ঘনিষ্ঠ এজেন্টও লিখিত বয়ানে জানিয়েছেন, কী ভাবে অযোগ্য চাকরি প্রার্থীদের টোপ দিয়ে টাকা তুলতেন জীবনকৃষ্ণ। জীবনকৃষ্ণের মুখোমুখি বসিয়ে ওই দুই এজেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে বলে ইডির দাবি।

    ইডি সূত্রে দাবি, সিবিআইয়ের নবম ও দশম শ্রেণির নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জীবনকৃষ্ণের ওই দুই এজেন্ট গ্রেফতার হয়েছিল। তারা এখন জামিনে মুক্ত।

    তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, জীবনকৃষ্ণের সংস্রবে থাকা ৩৮০০ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের একটি তালিকা মিলেছে। ওই তালিকার অনেকেরই চাকরি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ইডির দাবি। স্রেফ নবম, দশম শ্রেণি নয়, একাদশ- দ্বাদশের শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতিতেও জীবনকৃষ্ণের যোগ রয়েছে বলেও গোয়েন্দা সূত্রটি জানাচ্ছে।

    তদন্তকারীদের দাবি, বিভিন্ন পদের চাকরি দিতে জীবনকৃষ্ণ একটি ‘রেট চার্ট’ তৈরি করেছিলেন। এবং মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, বীরভূমে তাঁর ‘বিশ্বস্ত’ ১০-১২ জন এজেন্টকে ওই চার্ট দেন তিনি। ২০১২ সাল থেকেই এজেন্টদের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে একটু একটু করে টাকা তোলা হয় বলে ইডি সূত্রের দাবি। ক্রমশ প্রার্থী পিছু ৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ১০-১৫ লক্ষ টাকা এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ১৫-২০ লক্ষ টাকা নেওয়া হত বলে গোয়েন্দা সূত্রে দাবি। তদন্তকারীদের দাবি, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মী পদে চাকরির জন্য ৮-১০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছিল।

    তদন্তকারীদের দাবি, প্রথম পর্যায়ে অগ্রিম নেওয়া হত। লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ের পরে ধাপে ধাপে টাকা নেওয়া হত। নিয়োগপত্র হাতে আসার আগে পুরো টাকা অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হত বলে দাবি তদন্তকারীদের।

    ইডির কর্তাদের কথায়, মোবাইল ফোনের সূত্রে নিয়োগ দুর্নীতির কালোো টাকা কী ভাবে প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে ছিল, তারও তদন্ত চলছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)