• চিহ্নিত ৯২ কাঠা জমি, কয়েক দশক পরে নতুন শ্মশান শহরে, যৌথ উদ্যোগে শামিল কলকাতা পুরসভা এবং বেসরকারি সংস্থা
    আনন্দবাজার | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • দীর্ঘ কয়েক দশক পরে কলকাতায় গড়ে উঠতে চলেছে আরও একটি শ্মশানঘাট। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে। সেই পরিস্থিতিতে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই নতুন শ্মশান নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে। শহরের নামজাদা শিল্পপতিদের দ্বারা পরিচালিত সংস্থাটি আগেই নিমতলা এবং কেওড়াতলার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এ বার তারা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরে এই শ্মশান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে এই শ্মশানটি তৈরি করা হবে।

    শ্মশানটি তৈরি হবে হেস্টিংস সংলগ্ন দহিঘাট এলাকায়। শ্মশানটি নির্মাণের জন্য মোট ৯২ কাঠা জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ৩০ বছরের জন্য এই জমি কলকাতা পুরসভাকে ইজারাও দিয়েছে। শ্মশান নির্মাণের দায়িত্ব প্রথম দিকে পুরসভার হাতে থাকলেও পরে তাতে যুক্ত করা হয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। ৫০ কোটি টাকা খরচ করে এই অত্যাধুনিক শ্মশানটি নির্মাণ করা হবে। এখানে একদিকে যেমন থাকবে পাঁচটি কাঠের চুল্লি, তেমনি পরিবেশবান্ধব দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লিও রাখা হবে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্মশানের নির্মাণকাজ শেষ হলে তা পরিচালনার জন্য কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতেই। পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংস্থাটি কাজ করবে।

    প্রথমে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পুরসভার যৌথ উদ্যোগে শ্মশান নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু নানা প্রশাসনিক জটিলতায় সেই কাজ আর এগোয়নি। পরে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শ্মশান নির্মাণের দায়িত্ব পায়। তারা নিজেদের খরচে শ্মশান তৈরি করে পরে পুরসভার হাতে পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেবে। সম্প্রতি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে পুরসভা। এই কাজ সম্পূর্ণ হতে প্রায় দু’বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন পুরসভার আধিকারিকেরা। নির্মাণকাজ শেষ হলে এখানে একসঙ্গে সাতটি দেহ সৎকার করা সম্ভব হবে। ফলে কালীঘাটের কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে।

    বর্তমানে কলকাতা পুরসভার অধীনে মোট সাতটি শ্মশান রয়েছে। উত্তর কলকাতার নিমতলা, কাশী মিত্র ঘাট, কাশীপুরের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ মহাশ্মশান, মধ্য কলকাতার বিরজুনালা শ্মশানঘাট, দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা, সিরিটি ও গড়িয়া আদি মহাশ্মশান। দহিঘাটেরটি তৈরি হয়ে গেলে দক্ষিণ কলকাতায় আরও একটি শ্মশানের সংখ্যা বাড়বে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, “কলকাতার শ্মশানগুলি প্রতিদিন বিপুল চাপ সামলাচ্ছে। অনেক সময় দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় মৃতদেহ সৎকারের জন্য। নতুন শ্মশান তৈরি হলে এই চাপ অনেকটাই কমবে। পাশাপাশি আধুনিক পরিকাঠামোর কারণে মৃতদেহ সৎকারের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করা যাবে।”

    কলকাতা পুরসভার ন’নম্বর বোরোর অধীনে এই নতুন শ্মশানটি তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বোরো চেয়ারপার্সন দেবলীনা বিশ্বাস বলেন, “বড় গঙ্গার ধার বরাবর জায়গায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কলকাতা পুরসভা হাতে হাত মিলিয়ে এই শ্মশানটি তৈরি করবে। নীতিগত সিদ্ধান্ত পুরসভা নিয়েছে, আরও কিছু কাজ হয়ে গেলেই কাজ শুরুর দিনক্ষণ ঘোষণা হবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)