• গাজার গণহত্যার প্রতিবাদে রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ সমাবেশ
    আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে গত ২০ আগস্ট দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়শো মানুষ একত্রিত হয়ে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন। সমাবেশে শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা অংশ নেন। উপস্থিত মানুষরা হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে এবং স্লোগান দিয়ে জানান যে গাজায় নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা।

    প্রথমে মুম্বই পুলিশ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রতিবাদ অনুমোদন দেয়নি। এরপর আয়োজকরা বম্বে হাইকোর্টে আবেদন করলে আদালত পুলিশকে অনুমতি দিতে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশে ২০ আগস্ট দুপুর তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত সমাবেশ আয়োজনের সুযোগ পাওয়া যায়। আয়োজক দলের মধ্যে ছিল সিপিআই(এম), সিপিআই, সিপিআই(এমএল), সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস, এনসিপি (শরদপাওয়ার দল) এবং নাগরিক সংগঠনগুলির মধ্যে ইন্ডিয়ান পিপল ইন সলিডারিটি উইথ প্যালেস্টাইন ও অল ইন্ডিয়া পিস অ্যান্ড সলিডারিটি অর্গানাইজেশন।

    সমাবেশে নানা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বক্তব্য রাখেন। অভিনেত্রী সোয়ারা ভাস্কর বলেন, এটি কোনো ধর্মীয় ইস্যু নয়, বরং মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর প্রশ্ন। বিশিষ্ট সাংবাদিক পি. সাইনাথ বলেন, গাজার ইস্যু আমাদের দেশের সঙ্গে যুক্ত, কারণ মানবাধিকার ও ন্যায়ের প্রশ্ন সর্বজনীন। উপস্থিত আরও অনেক বক্তা পশ্চিমা শক্তিগুলির দ্বিমুখী ভূমিকা এবং ভারতের নীরবতার সমালোচনা করেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—“ফ্রি প্যালেস্টাইন”, “ইজরায়েল হলো সন্ত্রাসী রাষ্ট্র”, আবার অনেকেই স্লোগান দেন—“ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি।”

    সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারীরা একসুরে দাবি তোলেন—গাজায় যুদ্ধাপরাধ বন্ধ করতে হবে, সাধারণ নাগরিকদের জন্য অবরোধ তুলে নিতে হবে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান শেষ হলেও অংশগ্রহণকারীরা জানিয়ে দেন, এই আন্দোলন কেবল আজকের নয়, বরং বিশ্বজনীন ন্যায়বিচারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামের অংশ।

    সমাবেশ ঘিরে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও ছিল উল্লেখযোগ্য। অনেকেই মনে করেন, গাজার পরিস্থিতি শুধু দূরের একটি যুদ্ধ নয়, বরং এটি মানবিকতার প্রশ্ন, যেখানে নীরব থাকা মানে অন্যায়ের পাশে দাঁড়ানো। কয়েকজন তরুণ-তরুণী জানান, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত গাজার খবর দেখেন এবং সেখানকার শিশুদের দুর্দশা তাঁদের গভীরভাবে নাড়া দেয়। অনেকে আবার বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন আন্তর্জাতিক সংহতির ওপর ভর করে এগিয়েছিল, তেমনি আজ ভারতের নাগরিকদেরও গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

    শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাদের বক্তব্যে জানান, শিল্পকলা যদি কেবল বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সেটি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা হারায়। তাই তারা গান, নাটক, কবিতার মাধ্যমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দেবেন। সমাবেশ শেষে উপস্থিত মানুষরা প্রতিজ্ঞা করেন যে, তাঁরা কেবল একদিন নয়, ধারাবাহিকভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত আরও সক্রিয়ভাবে যুদ্ধবিরতির দাবি তোলে।
  • Link to this news (আজকাল)