• দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা 'হজম' করেছিল, ভূমিকম্পও টলাতে পারেনি, কিন্তু ৫ টাকার গুটখা ধ্বংস করল কলকাতার এই ব্রিজ! ‘ক্ষতির' টাকা দিতে হবে অজয় দেবগ...
    আজকাল | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার চিরন্তন পরিচয়, হাওড়া ব্রিজ। ১৯৪৩ সালে সম্পূর্ণ হওয়া এই ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় আজও বাঙালির গর্ব। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কিংবা ডাকশিনেশ্বর কালীমন্দিরের মতো ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের পাশে দাঁড়িয়ে হাওড়া ব্রিজ শহরের আধুনিকতার প্রতীক। প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে বহন করা এই সেতুটি শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং বাংলার ঐতিহ্য ও শক্তির প্রতীক। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলি প্রথম ১৮৭১ সালে এই সেতুর প্রস্তাব দেন। পরে জেমস মেডোস রেনডেল প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেকচারাল সংস্থা Rendell, Palmer & Tritton ১৯৩০-এর দশকে এর নকশা করে। পুরো সেতু নির্মাণে সময় লেগেছিল আট বছর এবং প্রয়োজন হয়েছিল ২৬,০০০ টন ইস্পাত। খরচ হয়েছিল প্রায় ৩.৩৩ কোটি টাকা। নাট-বল্টু ছাড়াই নির্মিত এই ক্যান্টিলিভার ব্রিজের দৈর্ঘ্য সেই সময়ে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে ছিল। 

    ১৯৪২ সালে জাপানি বিমানবাহিনী কলকাতায় একাধিক বোমা হামলা চালায়। শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, কিন্তু লক্ষ্যে থাকা সত্ত্বেও হাওড়া ব্রিজ অক্ষত থাকে। পরে নেটাজি সুভাষ বন্দরে ড্রেজিং চলাকালে উদ্ধার হওয়া একটি অবিস্ফোরিত বোমা আজ মাণিকতলা কলকাতা পুলিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। যুদ্ধের বোমা কিংবা ভূমিকম্প হাওড়া ব্রিজকে হার মানাতে পারেনি। অথচ আজকের দিনে এর সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের অসচেতনতা। ২০১৩ সালে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (KoPT)-এর প্রধান প্রকৌশলী এ কে মেহরা আবিষ্কার করেন যে সেতুর হ্যাঙ্গার বেসে মোটা গুটখার আস্তরণ জমে আছে। চুন, লবণ ও থুথুর সঙ্গে মিশে তৈরি হওয়া ক্ষতিকারক রাসায়নিক বিক্রিয়া ধাতব অংশকে ক্ষয় করছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় KoPT ইস্পাতের প্লেট বদলে ফাইবারগ্লাসের ধোয়াযোগ্য আবরণ বসিয়েছে।

    সম্প্রতি এই গুটখা সমস্যাকে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া ঝড় তোলে। কেউ লিখেছেন, “Ajay Devgn supremacy”, আবার কেউ মন্তব্য করেন, “Power of 5 rupees”। এমনকি অনেকে মজার ছলে প্রস্তাব দেন ক্ষয়ক্ষতির খরচ অভিনেতা অজয় দেবগনকেই দিতে হবে। তবে অনেকেই কঠোর ভাষায় গুটখা-খাওয়া অভ্যাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। অসংখ্য চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে হাওড়া ব্রিজ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন যাত্রী বহন করা এই সেতু শুধু কলকাতার নয়, সমগ্র বাংলার গর্ব। তবে গুটখা-সহ অসচেতন আচরণ যদি না থামে, তবে এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের ক্ষয় অচিরেই মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই নাগরিক সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

    হাওড়া ব্রিজ শুধু একটি সেতুই নয়, কলকাতার জীবনীশক্তি। প্রতিদিন গড়ে দেড় লক্ষ যানবাহন এবং প্রায় সাড়ে চার লাখ পথচারী এই সেতু পার হন। শহরের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রবাহ এই ব্রিজ ছাড়া অকল্পনীয়। সিনেমা, সাহিত্য ও চিত্রকলায় হাওড়া ব্রিজ একাধিকবার অমরত্ব পেয়েছে—বিশেষত ১৯৫৮ সালের ‘হাওড়া ব্রিজ’ সিনেমার পর থেকে এ নাম আরও জনপ্রিয়তা পায়। পর্যটকদের কাছে এটি আজও এক অন্যতম আকর্ষণ। এমনকি রাতের আলোয় সজ্জিত ব্রিজের সৌন্দর্য দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে ভিড় জমে। তাই শুধু ইস্পাতের কাঠামো নয়, হাওড়া ব্রিজ আসলে বাংলার আবেগ, গর্ব আর ঐতিহ্যের প্রতীক। 

     
  • Link to this news (আজকাল)