‘মিঠুনদা বিজেপির প্রোপাগান্ডা ছবির চিত্রনাট্য লিখতে বলেছিলেন, রাজি হইনি’ বিস্ফোরক এন কে সলিল
আজকাল | ২৮ আগস্ট ২০২৫
৭৫ পেরিয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। বিতর্ক, কটাক্ষ পেরিয়ে আজও বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি। প্রিয় অভিনেতা তো বটেই। তবে ইদানীং রাজনৈতিক বাক-বিতণ্ডা যেন পিছুই ছাড়ছে না এই বিজেপি নেতার। রাজনীতির ময়দানের পাশাপাশি ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবিতেও উত্তরোত্তর তাঁর চলাফেরা বাড়ছে। এবং রীতিমতো দ্রুতহারেই বাড়ছে। ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি আসলে যা বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অর্থাৎ, যে ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে নির্মাতাদের বিশেষ কোনও মতাদর্শ প্রচারের লক্ষ্য থাকে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’ থেকে শুরু করে হালের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই এই ধরনের ছবির সংখ্যা যে ক্রমশ বাড়ছে তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার মুখ খুলেছেন নানান তারকা, ছবি সমালোচকেরা। এই আবহেই ফের ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মিঠুন। এবং তা বাংলা ভাষায়! সেই ছবির গল্প-চিত্রনাট্যের দায়িত্ব নাকি মিঠুন দিতে চেয়েছিলেন একসময় টলিপাড়ার জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার এন কে সলিল-কে। যিনি মিঠুনের ১৬টি বক্স-অফিস সফল ছবির গল্প-চিত্রনাট্যকার। আর এই দাবি, অন্য কেউ নয় করলেন খোদ এন কে সলিল! শুনল আজকাল ডট ইন।
“মাস কয়েক আগে মিঠুনদা কলকাতায় এসেছিলেন। ওঁর সঙ্গে ছিলেন পরিচালক পথিকৃৎ বসু। ও-ই আমাকে ফোন করে বলে যে ‘দাদা তোমায় খুঁজছে, এসো।’ শুনে গেলাম। কলকাতায় এলে রাজারহাটে একটি নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে ওঠেন মিঠুনদা। সেখানেই গেলাম। দেখা হতেই, জড়িয়ে ধরলেন। বাড়ির সবার খোঁজ খবর নিলেন। তারপর জানালেন যে তিনি একটি ছবি করতে চান। যেরকম বাংলা ছবি উনি আর আমি করে এসেছেন। প্রতিবাদী চরিত্র, অ্যাকশন থাকবে। এত পর্যন্ত সমস্যা ছিল না। তবে তারপরেই মিঠুনদা বললেন এ ছবির মূল গল্প হবে বাংলায় যে যে বিষয় নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে এবং যা যা বিচারাধীনও বটে। যেমন - গরু পাচার, কয়লা চুরি, নিয়োগ দুর্নীতি, চাকরি দুর্নীতি... সঙ্গে আরও বহু স্ক্যাম...এসব আর কী! সব শুনে আমার কোথাও মনে হয়েছিল এই ছবিটা বিজেপির ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি হতে পারে। কারণ মিঠুনদা এখন একটি বিজেপি দলের নেতা। কোনও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ছবি করাটা ঠিক নয়, আমার মতে। আর তাছাড়া দেখুন, আমি একজন শিল্পী, কখনওই চাইনি কোনও রাজনৈতিক দলের ছায়ায় আমার নাম আসুক। তাই আমি কোনও ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবির অংশ হব না! সেইজন্য ভদ্রভাবে পথিকৃৎকে জানিয়ে দিয়েছিলাম এই ছবি করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।”
সামান্য থেমে ‘জাত গোখরো’ সংলাপ খ্যাত এই চিত্রনাট্যকার আরও বললেন, “তবে হ্যাঁ, মিঠুন যদি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য না হতেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমি আগ্রহী হতাম। তখন অন্যভাবে গল্প, চিত্রনাট্য লিখতাম, ভাবতাম। কারণ প্রতিটি মানুষের প্রতিবাদের ভাষা আলাদা। আরে আমি তো সারাজীবন প্রতিবাদী ছবি-ই করে এসেছি। যখন এমএলএ ফাটাকেষ্ট ছবির গল্প-চিত্রনাট্য লিখেছিলাম, তখন তো রাজ্যে আসীন বামফ্রন্ট সরকার। সেই ছবিতে তো রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বহু ব্যাপার দেখিয়েছিলাম। কই তখন তো কেউ কোনও আঙ্গুল তোলেননি। তাহলে? আসলে, আমার লেখায় আমি সবসময় মানুষকে এগিয়ে রেখেছি কোনও সরকার, বিরোধী পক্ষের বদলে। যাক সেসব...আর তখন তো মিঠুনদা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য-নেতা কিছুই ছিলেন না। তাই সমস্যা হয়নি।
তবে এসবের বাইরে আমি মনে করি, মিঠুনদার কিন্তু মূলধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে ফিরে আসা উচিত। অবশ্যই উচিত। আজও ওঁকে ভীষণ ভালবাসি।”