ভোটার তালিকায় ‘কারচুপি’ করার অভিযোগে চার জন রাজ্য সরকারি আধিকারিককে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হতে হয়েছে। রাজ্য সরকার না-চাইলেও জাতীয় নির্বাচন কমিশনের চাপেই তা করতে হয়েছে। নির্বাচন সদনের সঙ্গে যখন নবান্নের এ হেন সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে, তখন বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিডিওদের ‘বার্তা’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বলেন, ‘‘ললিপপ সরকার বিডিও, এসডিও, ডিএম, এসপিদের ভয় দেখাচ্ছে। বলছে চাকরি খেয়ে নেব, নয় জেলে পুরে দেব। নির্বাচন কমিশন আসে আর যায়, তার পরে কিন্তু রাজ্য সরকার থাকে। গায়ের জোরে এ সব হবে না।’’ সেই সঙ্গে বিজেপির উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘ভান্ডারা আমাদের কাছেও আছে। যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার আছে, তেমন আপনাদের দুর্নীতির ভান্ডারাও আছে। খুলে দেব, ফাঁস করে দেব।”
নবান্নের একাধিক কর্তার বক্তব্য, কমিশনের ‘চাপ’-এর ফলে প্রশাসনিক মহলেও শঙ্কার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে প্রশাসক মমতা বার্তা দিলেন ডিএম, এসপি, বিডিওদের। যাঁরা ভোট প্রক্রিয়ায় অন্যতম স্তম্ভ। অনেকের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী নির্দিষ্ট কিছু পদের কথা উল্লেখ করলেও আসলে তিনি সার্বিক ভাবে রাজ্য প্রশাসনকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন।
মমতার সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক চাপানউতর শুরু বাংলার চার আধিকারিককে কেন্দ্র করে। ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তকরণে কারচুপির অভিযোগ ওঠে ওই চার জনের বিরুদ্ধে। তাঁরা হলেন বারুইপুর পূর্ব (১৩৭) বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী, সহকারী এইআরও তথাগত মণ্ডল, ময়নার ইআরও বিপ্লব সরকার এবং এইআরও সুদীপ্ত দাস। চার জনকেই সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ওই চার আধিকারিককে সাসপেন্ড ও তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে না। রাজ্যের ওই সিদ্ধান্তের পর পদক্ষেপ করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তলবে দিল্লি যেতে হয় পন্থকে। দিল্লি থেকে মুখ্যসচিব ফেরার পরে গত ২১ অগস্ট চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করে রাজ্য। তবে ওই চার জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করার কথা বলা হলেও রাজ্য আপাতত ‘সময়’ চেয়েছে।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) নিয়ে বৃহস্পতিবারও সরব হন মমতা। কেন্দ্রীয় সরকার, বিজেপি এবং কমিশনকে এক বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানান তিনি। মমতা বলেন, “কিছু হিংসুটে লোক আছে। দেখলেই জ্বলে, আর লুচির মতো ফোলে। এরা হচ্ছে তাই। সেলফিশ জায়েন্টেরা, যারা হাই লোডেড ভাইরাস, তারা হিংসা করে আমাদের টাকা বন্ধ করে দিয়ে ভাবছে এনআরসি চালু করবে এবং সকলের ভোটাধিকার কেড়ে নেবে। জীবন থাকতে কারও ভোটাধিকার কাড়তে দেব না।”