সংবাদদাতা, কাটোয়া: বাবুমশাই, হাম সব তো রঙ্গমঞ্চ কি কাঠপুতুলিয়া হ্যায়...। রাজেশ খান্নার মুখে ‘আনন্দ’ সিনেমার এই ডায়ালগ আজও কথায় কথায় ফিরে আসে। আর সেই ‘কাঠপুতুলিয়া’র আঁতুড়ঘর পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামে যখন মুম্বইয়ের লোকজন আসেন তখন আনন্দের সীমা থাকে না শিল্পীদের। তাঁরা এসে পুজো মণ্ডপ ও বিনোদনের মঞ্চ সাজানোর জন্য কাঠপুতুল তৈরির অর্ডারও দেন। এবার পুজোয় অর্ডার বেশ খানিকটা বেশি। মণ্ডপ সাজানোর জন্য হরেক রকমের কাঠপুতুল তৈরির বরাত দিয়েছেন মুম্বইয়ের এক পুজো উদ্যোক্তা। এমনকী, মরুরাজ্য রাজস্থান থেকেও কাটোয়ার নতুনগ্রামের প্রচুর অর্ডার আসছে। ফলে, গ্রামে খুশির হাওয়া বইছে।
পূর্বস্থলী-২ ব্লকের পিলা অঞ্চলের নতুনগ্রাম বহু বছর ধরেই কাঠপুতুলের গ্রাম হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই গ্রামের ৫০টি পরিবার পূর্বপুরুষের আমল থেকেই বংশ পরম্পরায় কাঠের পেঁচা তৈরির শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। এখানকার শিল্পীরা কাঠের রাজা-রানি, গৌর-নিতাই, পেঁচা তৈরি করেই সংসার চালান। বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বই সহ রাজ্যের সমস্ত জায়গায় এখানকার শিল্পীদের শিল্পকর্ম এখন পাড়ি দেয়। কাঠপুতুল তৈরি করে গ্রামের অর্থনৈতিক হাল ফিরেছে। তবে কাঠপুতুলের ঐতিহ্যকে আগলে রেখে পরিসর বদলেছে। নেট দুনিয়াকে হাতিয়ার করে শিল্পের প্রসার ঘটেছে।
আগে সাধারণত তাঁদের তৈরি কাঠের পেঁচা, পুতুল নিয়েই মেলায় বসতেন শিল্পীরা। এখন সে জায়গায় তাঁদের তৈরি কাঠের নানা সামগ্রীও বিদেশের মাটিতে পৌঁছে যাচ্ছে। নতুনগ্রামে এখন কাঠপুতুল শিল্পের নতুনত্বের ছোঁয়ায় উন্নতি ঘটছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই গ্রামে কাঠপুতুল শিল্পের পরিকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে। এখন নতুনগ্রামের শিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হওয়া কাঠের বড় বড় পেঁচা, রাজা-রানি, শ্রীকৃষ্ণ দিয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে। শিল্পীদের কাজের বরাত বেড়েছে। মুম্বই, অসম, রাজস্থান ও কলকাতার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপের কর্তারা ভিড় জমাচ্ছেন ছোট্ট নতুনগ্রামে।
অসমে যেমন বড় বড় কাঠের পেঁচা দিয়ে মা লক্ষ্মীর থিমের পুজো মণ্ডপ গড়ছে। তাই নতুনগ্রামের শিল্পীদের বড় বড় কাঠের পেঁচা তৈরির বরাত দিয়েছেন। আবার হাবড়ার একটি মণ্ডপ বড় বড় কাঠের রাজা-রানি দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে তুলবেন। এছাড়াও বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে কাঠের পেঁচা, পুতুল দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে বাঙালিয়ানাকে তুলে ধরবেন।
নতুনগ্রামের কাঠপুতুল শিল্পী গৌতম ভাস্কর বলেন, আমার কাছে রাজস্থান, মুম্বই, হাবড়া থেকে কাঠের পাঁচ থেকে দশ ফুট লম্বা পেঁচা, রাজা-রানি তৈরির বরাত এসেছে। সব মিলিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার বরাত পেয়েছি। আমাদের নতুনগ্রামের বিখ্যাত কাঠের পেঁচা ও অন্যান্য শিল্পকর্ম দিয়ে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরি হবে। এখন আমাদের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। নতুন প্রজন্মের শিল্পী গৌরাঙ্গ ভাস্কর বলেন, এই শিল্পকর্ম বাপ ঠাকুরদার আমলের। বংশ পরম্পরায় তা চলে আসছে। আমরাও পড়াশোনা শেষ করে এই শিল্পকর্মকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছি। বাবা আগে মেলায় ঘুরে ঘুরে শিল্পকর্ম বিক্রি করতেন। আর এখন আমরা এখন অনলাইনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজের পরিসর বাড়িয়েছি।-নিজস্ব চিত্র