বেপরোয়া ট্রাক্টরের ধাক্কায় মৃত্যু শিশুকন্যার, আগেই মৃত্যু বাবা-মেয়ের, রাস্তায় পুলিসি নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন
বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দিনে তো বটেই, সন্ধ্যা নামলেই মল্লারপুর থেকে তারাপীঠ যাওয়ার রাস্তায় ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে। বেপরোয়া ট্রাক্টর চলাচলে অতিষ্ট এলাকার মানুষ। মল্লারপুরের মহুলা গ্রামের কাছে দুর্ঘটনায় বাবা, মেয়ের পর চার বছরের নাতনিরও মৃত্যু হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পর এলাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, এই রাস্তায় স্কুলপড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষকে জীবন হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় এই রাস্তার মহুলা গ্রামের কাছে বেপরোয়া ট্রাক্টরের ধাক্কায় টোটোয় থাকা বাবা পথিক লেট ও মেয়ে পমি লেটের মৃত্যু হয়। জখম পথিকবাবুর স্ত্রী, জামাই ও দুই নাতনিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামপুরহাট মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। রাতের দিকে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁদের চার বছরের নাতনি ঈশা লেটের। পরে জামাই কার্তিক লেট ও এক বছরের আর এক নাতনিকে বর্ধমান মেডিক্যালে রেফার করা হয়। শাশুড়ি রীনা লেট রামপুরহাট মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। যদিও জামাই ও অপর নাতনির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। মেডিক্যালের বেডে শুয়ে রীনাদেবী জানান, বড় নাতনি রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছিল। আমাকে কোলে নিতে বলছিল। কিন্তু ওকে কোলে নেওয়ার মতো অবস্থা আমার ছিল না। আর কোনওদিন কোলে নিয়ে ওকে আদর করতে পারব না। সেইসঙ্গে স্বামী, মেয়ে সবাইকে হারালাম।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর এই রাস্তায় পথ নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, মল্লারপুর থেকে অল্প সময়ের মধ্যে এই রাস্তা দিয়ে তারাপীঠ আসা যায়। সেজন্য অনেক পুণ্যার্থী থেকে সাধারণ মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করেন। কিন্তু বালি, পাথরবোঝাই ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্যে আমরা অতিষ্ঠ। নম্বর প্লেটহীন ট্রাক্টর বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই। দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই দুর্ঘটনায় দু’টি পরিবার শেষ হয়ে গেল।
এই রাস্তার পাশেই রয়েছে মহুলা ভেলিয়ান হাইস্কুল। রামপুরহাটের আটলা, মল্লারপুরের গুরচন্দ্রপুর, শান্তিপুর, মহুলা সহ আশপাশের গ্রামের কয়েকশো পড়ুয়া এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে। অভিভাবক পূর্ণিমা লেট বলেন, বাচ্চারা না ফেরা পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়। গ্রামবাসীরা বলছেন, রাতের দিকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকে ট্রাক্টরচালকরা। সিঙ্গেল রোড হওয়া সত্ত্বেও দ্রুতগতিতে চলাচল করে। স্কুলের টিচার ইনচার্জ শিবাশিস সাহা বলেন, পড়ুয়াদের জীবন নিয়ে চিন্তিত আমরা। অভিভাবকদের মিটিংয়েও এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশাসনকেও জানানোয় একাধিক হাম্প, গার্ডরেল ও সিভিক ভলান্টিয়ার দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক মাস আগে রাস্তায় নতুন করে পিচ দেওয়ার পর সেসবই উধাও হয়ে যায়। তিনি বলেন, ছুটির সময় স্কুলের মুখে রাস্তা গার্ড করে পড়ুয়াদের বের করতে হয়। খুব শীঘ্রই স্কুলে আসা ও ছুটির সময় এই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য থানা ও প্রশাসনিকস্তরে চিঠি দেব।
পুলিস জানিয়েছে, ওই রাস্তায় বেশ কয়েকটি বাঁক অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ। এদিন থেকেই ওই রাস্তায় সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েনের পাশাপাশি গার্ডরেল দিয়ে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাম্প বসানোর জন্য পিডব্লুডির সঙ্গে কথা বলব। গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এলাকার ট্রাক্টর ও অন্যান্য যানবাহনের চালকদের নিয়ে মিটিং করা হবে।