নন্দকুমারে স্বঘোষিত ডাক্তাররা শাসক ও বিরোধী দলের মাথা!
বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ডিগ্রিহীন ডাক্তাররাই নন্দকুমার ব্লকের বাবলপুর গ্রামের তৃণমূল ও বিজেপির মুখ। তাঁরা শাসক ও বিরোধী—দুই দলেরই সম্পদ। বাবা যদি তৃণমূলের নেতা হন, ছেলে তা হলে বিজেপির। এভাবেই রাজনীতির সমীকরণকে ম্যানেজ করে অর্শ, বলি ভগন্দরের চিকিৎসার নামে সম্পদের পাহাড় বানিয়ে ফেলেছেন ব্যোমকেশ সামন্ত, নারায়ণ সামন্তরা। সঙ্কটে ‘রক্ষাকবচ’ উভয় দলের রাজনৈতিক পরিচয়। দু’টি দলের যে কোনও কর্মসূচিতে তাঁরা হয়ে ওঠেন ‘গৌরী সেন’। স্বভাবতই তাঁদের তোষামোদ করে চলেন নেতারা। সেক্ষেত্রে প্রশাসন কতখানি ‘ডাক্তার গ্রাম’-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও জেলা প্রশাসনের অবস্থান বেশ কঠোর। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেছেন, ‘সামন্তপাড়ায় ডাক্তারি বিদ্যা বন্ধ করে দেওয়া হবেই। সিএমওএইচ তদন্ত করে রিপোর্ট দিক। তারপর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে অবশ্য বলেন, ‘সামন্তপাড়ার কয়েকজন আগে আমাদের দলের নেতা ছিলেন। তাঁরা পার্টির পদে ছিলেন। তবে, সাংগঠনিক স্তরে রদবদল হয়েছে। এখন তাঁরা কোনও পদে নেই। সাধারণ কর্মী হতে পারেন।’
সামন্তপাড়ার ব্যোমকেশ সামন্ত বড়গোদাগোদার অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাশিয়ার। তাঁর ছেলে শিবশঙ্কর বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য। বাবা-ছেলে একই বাড়িতে থাকেন। একই চেম্বারে প্র্যাকটিস করেন। দু’জনেই ফিসচুলার অপারেশন করেন। শাসক ও বিরোধী উভয় দলকে হাতে রাখতেই ব্যোমকেশবাবুদের এই স্ট্র্যাটেজি। অট্টালিকার মতো বিশাল দু’তলা বাড়ি। লাগোয়া ‘নার্সিংহোম’। ব্যোমকেশবাবুর দুই ছেলে এবং স্ত্রী চারজনই ডাক্তারি করেন। তাঁরা জানেন, যে কোনও সময় বিপদ আসতে পারে। শাসক ও বিরোধী দুই রাজনৈতিক দলকে হাতে রাখতে বাবা-ছেলে দুই দলের নেতা। সামন্তপাড়ার আরেক প্রভাবশালী হলেন নারায়ণচন্দ্র সামন্ত। পেশাদারি চিকিৎসকের মতো সপ্তাহে সাত দিনে সাত জায়গায় চেম্বার। নারায়ণবাবুর বাড়ি দেখে অনেকেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন। বিরাট এলাকাজুড়ে তিনতলার বাড়ি যেন রাজপ্রাসাদ! বাড়ির সামনে বিরাট ছাউনি। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, চিকিৎসা নিয়ে কোনও হাঙ্গামা হলে মোকাবিলা করার জন্য বাহিনীও রয়েছে। নারায়ণচন্দ্র সামন্ত এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা। প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যও। ২০২৩ সালে তাঁদের একসঙ্গে জেলা পরিষদ ও গ্রাম পঞ্চায়েতের টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। দুই জায়গায় মনোনয়ন জমা করায় জেলা পরিষদে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। যে কারণে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৮ ভোটে নিজের খুড়তুতো ভাই শিবশঙ্করের কাছে পরাজিত হন। তিনি বাবলপুর সমবায় সমিতির সম্পাদক পদেও রয়েছেন। তিনিও দলকে ঢাল করে ডিগ্রি ছাড়াই চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাঁর ছেলে শুভদীপও নামের আগে ডাক্তার লিখে রোগী দেখছেন। ফিসচুলার অপারেশনেও বাবার সহকারী। নন্দকুমারের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা প্রদীপ দে বলেন, ‘ব্যোমকেশ সামন্ত ও নারায়ণচন্দ্র সামন্ত দু’জনেই আমাদের পার্টির নেতা। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই অর্শ, বলি, ভগন্দরের চিকিৎসা করে আসছেন।’ বিজেপির নন্দকুমার মণ্ডল-১ সভাপতি গোপালকৃষ্ণ বেরা বলেন, শিবশঙ্কর আমাদের দলের মেম্বার। তবে, তাঁদের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। যে কেউ শরীরে ছুরি-কাঁচি চালাতে পারেন না। সেদিক থেকে প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত।’