• গোলপার্কের গেস্টহাউসে বেআইনি কল সেন্টার, ধৃত আইনজীবী সহ ১১
    বর্তমান | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গোলপার্ক মোড় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গেস্ট হাউস। নীচে বহিরাগতদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সবচেয়ে উপরের তলায় সবসময় বন্ধ থাকে দু’টি ঘর। সেখানে গেস্ট হাউসের আবাসিকদের যাওয়া নিষেধ। সেখানে হানা দিতেই পর্দাফাঁস। গেস্ট হাউসের আড়ালে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি কল সেন্টার। ফেঁদে বসেছেন গেস্ট হাউসের মালিকেরই পুত্র অনুরাগ মণ্ডল। তিনি পেশায় আইনজীবী। কলকাতার বিভিন্ন আদালতে তাঁর পসার। ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিসের সাইবার থানা। 

    বুধবার দুপুরে সাইবার বিভাগের কাছে বিশেষ প্রযুক্তি থেকে একটি অ্যালার্ট আসে। দুঁদে বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেন, গোলপার্কের একটি জায়গা থেকেই নিয়মিত মোটা অঙ্কের বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টাকা ঢুকছে। সন্দেহ হয় সাইবার পুলিসের। খুঁজে বের করা হয় আইপি অ্যাড্রেস। সেটির লোকেশন তদন্তকারীদের পৌঁছে দেয় গোলপার্কের সাউথ সিটি কলেজের পাশের একটি পুরনো গেস্ট হাউসের সামনে। সেটির নাম সাউথ সিটি গেস্ট হাউস। তবে পুলিসের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করেন গেস্ট হাউসের রিসেপশনে বসা কর্মী। কিন্তু, সেখানে তল্লাশি অভিযান চালাতেই পর্দা ফাঁস হয়। সবচেয়ে উপরের তলায় দু’টি ঘর বন্ধ। তা খুলতেই তদন্তকারীরা দেখেন— ল্যাপটপ, রাউটার, মোবাইল নিয়ে রমরমিয়ে চলছে কল সেন্টার। কাজ করছিলেন ১০ জন যুবক। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সাইবার পুলিস। বেরিয়ে আসে কল সেন্টারের মালিকের নাম। আরও খোঁজ নিয়ে পুলিস জানতে পারে, কল সেন্টারের ‘কর্তা’ অনুরাগ মণ্ডল আদতে সাউথ সিটি গেস্ট হাউসের মালিকের পুত্র। মাস ছ’য়েক ধরে সেখানে কল সেন্টারের বেআইনি ব্যবসা খুলে বসেছেন তিনি। সূত্রের খবর, সকালে শহরের বিভিন্ন আদালতে মামলা লড়েন আইনজীবী অনুরাগ। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থের পুরোটাই ‘লগ্নি’ করেন বেআইনি কল সেন্টারে। লালবাজার জানিয়েছে, গোলপার্কের ওই গেস্ট হাউস থেকে একটি হার্ড ডিস্ক, একটি রাউটার, ৪টি ল্যাপটপ, ১৫টি মোবাইল, হোটেলের রেজিস্টার, লেনদেনের কিছু স্ক্রিনশট বাজেয়াপ্ত করেছে সাইবার বিভাগ। একইসঙ্গে পুলিসের দাবি, একজন অভিযুক্তের ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে উদ্ধার হয়েছে এক হাজার ডলার। তবে ঘটনাস্থল থেকে কোনও নগদ উদ্ধার হয়নি। প্রতারণার পুরো টাকাটাই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ত বলে তদন্তকারীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন। কীভাবে বিদেশিদের প্রতারণা চলত গোলপার্কের এই গেস্ট হাউস থেকে, ধৃতদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস। এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে অভিযুক্তদের পেশ করা হয়। ধৃত ১১ জনকেই ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রী।
  • Link to this news (বর্তমান)