• পরপর গায়েব হয়ে যাচ্ছে বাঘ, বর্ষা বাড়তেই জঙ্গলের ভিতর ঘনাচ্ছে রহস্য, কালঘাম ছুটছে কর্তৃপক্ষেরও...
    আজকাল | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রবল বর্ষণে ব্যাহত হয়েছে রাজস্থানের রণথম্ভোর ন্যাশনাল পার্কের কার্যক্রম। এই অভয়ারণ্যে টানা বর্ষণের কারণে ৭০টিরও বেশি বাঘের আবাসস্থলে সাফারি রুট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর ফলে বনকর্মীদের পক্ষে টহল চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে কারণ গত এক বছরে রণথম্ভোর ও সারিস্কা থেকে অন্তত ১৩টি বাঘ নিখোঁজ হয়েছে। ২০২৪ সালে বন বিভাগ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, দুই অভয়ারণ্য মিলিয়ে গত এক বছরে মোট প্রায় ২৫টি বাঘ নিখোঁজ হয়েছে—যার মধ্যে রণথম্ভোর থেকে ১১টি এবং সারিস্কা থেকে ২টি। অতিরিক্ত ক্যামেরা ট্র্যাপ বসানো হলে ১২টি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে বাকি ১৩টির এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

    জানা গিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে রণথম্ভোরের বিখ্যাত বাঘ T-92, T-20, T-70, T-71, T-76 এবং সারিস্কার ST-13 ও আকবরপুর রেঞ্জের টাইগ্রেস 2401। দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ বাঘ খুঁজে বের করতে গঠিত কমিটি এখনও কোনও হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেনি। বনকর্মীদের মতে, প্রবল বর্ষণের কারণে বাঘরা গুহা বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে। রাজ্যের বনমন্ত্রী সঞ্জয় শর্মা জানিয়েছেন, কয়েকটি বাঘ হয়তো মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কের দিকে চলে গেছে, কারণ বাঘ প্রায়ই এলাকা পরিবর্তন করে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে। তিনি আরও জানান, নিখোঁজ হওয়া বাঘগুলির মধ্যে অনেকেই বয়স্ক, যাদের স্বাভাবিক আয়ু ১৫ থেকে ১৮ বছর—তাই প্রাকৃতিক কারণে কিছু বাঘ মারা গিয়েও থাকতে পারে। এদিকে, অতিবর্ষণের কারণে অভয়ারণ্যের ভেতরে টহল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাগমার্ক ট্র্যাকিং বা ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর মতো প্রযুক্তিও কার্যকর হচ্ছে না। 

    সারিস্কায় তিন বছর ধরে নিখোঁজ ST-13-কে খুঁজে বের করতে বিশেষ অভিযান চালানো হলেও এখনও সাফল্য মেলেনি। এমন অবস্থার মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় রণথম্ভোরে ঘটে আরেক ঘটনা। জোন ৬–এ সাফারি চলাকালীন এক গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে ২০ জন পর্যটক জঙ্গলের ভেতর আটকে পড়েন। অভিযোগ, গাইড অন্য গাড়ি আনতে গিয়ে পর্যটকদের ফেলে যান। পরে ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে অভয়ারণ্য প্রশাসন নড়েচড়ে বসে এবং বিষয়টি ইতিমধ্যেই তদন্তের আওতায়। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে কুলতলির দেউলবাড়ি এলাকায় বনদপ্তরের পাতা খাঁচায় খাঁচাবন্দি হয় বাঘ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় শনিবার সকালে কুলতলি ব্লকের অন্তর্গত দেউলবাড়ি এলাকায় চাষের জমিতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। বাঘের পায়ের ছাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসীরা। এরপর তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরকে।

    ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বনদপ্তরের কর্মীরা। বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘের গতিপথ নির্ধারণ করেন বনকর্মীরা। গোটা এলাকা জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এরপর বাঘটিকে ধরার জন্য বনদপ্তরের পক্ষ থেকে পাতা হয় খাঁচা। অবশেষে গভীর রাতে বনদপ্তরের পাতা খাঁচায় বন্দি হয় বাঘ। এই বিষয়ে বনদপ্তরের এক কর্মী জানান, 'গতকাল এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তড়িঘড়ি ছুটে আসি আমরা। এলাকাবাসীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গোটা এলাকা জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এরপর বাঘটিকে খাঁচা বন্দি করানোর জন্য বেশ কয়েকটি খাঁচা পাতা হয় ছাগলের টোপ দিয়ে। গভীর রাতে হঠাৎই আমরা ছাগলের চিৎকার শুনতে পাই।এরপর তড়িঘড়ি আমরা খাঁচার কাছে গেলে দেখতে পাই খাঁচা বন্দি হয়েছে বাঘ। বাঘটিকে উদ্ধার করে ঝড়খালিতে নিয়ে যাওয়া হবে এবং বাঘটির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর পুনরায় বাঘটিকে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।' অবশেষে বাঘটি খাঁচা বন্দি হওয়াতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন দেউলবাড়ির বাসিন্দারা।
  • Link to this news (আজকাল)