বন্যা কবলিত ঘাটালে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ত্রাণ বিলি করেছে গুজরাতের সুরাতের একটি বাঙালি স্বর্ণশিল্পী সংগঠন। ত্রাণ বিলিতে সাহায্য করতে দেখা গিয়েছে ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটকে।
এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলের অন্দরে শোরগোল শুরু হয়েছে। কারণ, বর্তমানে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘরে ফেরা পরিযায়ীদের জন্য আগামী এক বছর মাসিক পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। জোর দিয়েছেন বিকল্প কর্মসংস্থানে। এত প্রয়াস সত্ত্বেও স্বর্ণশিল্পীদের সংগঠন কেন বিজেপির উপর আস্থা রাখছে প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। যে সংগঠন ত্রাণ বিলি করেছে সেখানে যুক্ত ঘাটাল থেকে সুরাতে সোনা-রুপোর অলঙ্কার তৈরিতে কাজে যাওয়া ঘাটালের একাধিক যুবক। পদ্ম শিবির জানিয়েছে, ভিন্ রাজ্যের অন্য স্বর্ণ শিল্পী সংগঠনগুলিও যোগাযোগ করছে। ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, “সুরাতে বাঙালি জুয়েলারি সংগঠনের তরফে শুকনো ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। ওই সংগঠন সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। আরও একাধিক স্বর্ণ শিল্পী সংগঠন যোগাযোগ করেছে।” তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “মানুষ সবই বোঝে। মুখ্যমন্ত্রী লড়াই করে ভিন্ রাজ্যে সমস্যায় পড়া পরিযায়ী পরিবার গুলির পাশে দাঁড়িয়ে ফিরিয়ে এনেছেনে। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই অবস্থায় পুরোপুরি ব্যাকফুটে বিজেপি। তাই নাটক করতে দু’একটা সংগঠনকে নিয়ে ত্রাণ বিলি করছে তারা। এতে কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না।”
তৃণমূল নেতৃত্ব যাই ব্যাখ্যা দিন, দলের নীচুতলার একাংশ প্রশ্ন তুলছে, মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতার পরেও দলীয় পদাধীকারীরা পরিযায়ী সংগঠন গুলির কাছে পৌঁছতে পারছেন না কেন। বিজেপি পারলে তৃণমূল পারবে না কেন। কোথায় থাকছে ঘাটতি? যে সংগঠনটি ত্রাণ বিলি করেছে সেটি বিজেপি শাসিত গুজরাতের হওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে আরও। সুরাতের বাঙালি জুয়েলারি ওয়েলফেয়ার কমিটির এক সদস্য অবশ্য বলছিলেন, “আমরা প্লাবিত বাসিন্দাদের পাশে থাকতেই এমন কর্মসূচি নিয়েছি। অন্য কোনও লক্ষ্য নেই।”
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পাঁচ বারের জন্য এ বার জলমগ্ন হয়েছে ঘাটাল। বুধবারও ঘাটালের একটা বড় অংশ জলের তলায়। জলস্তর না বাড়লেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। থমকে গিয়েছে জনজীবন। পুজোর মাথায় জীবন-জীবিকা নিয়ে উদ্বেগে ঘাটালবাসী। হতাশ কৃষকেরাও। বন্যায় ত্রাণ বিলি নিয়ে রাজনৈতিক আকচাআকচি নতুন নয়। গতবারের ত্রাণ রাজনীতিও ভাল ভাবে নেয়নি প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা। তৃণমূল গোড়া থেকে শুকনো ত্রাণ ও রান্না করা খাবার বিলি করেছিল। তার পাল্টা ঘাটালে তিন দিনের বিশেষ ত্রাণ শিবির ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বন্যার্তদের পাশে বসে খাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু খাওয়া তো দূর, দিনের শেষে খাবারও বিলি না করে ঘাটাল ছাড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছিল বিজেপিও।
এ বার কিছুটা আগেই নামল বিজেপি। তবে সরাসরি নয়। আড়াল রেখে। সেই আড়ালই বিঁধছে শাসক শিবিরকে।