• ঝলসে মৃত্যু ডেলিভারি বয়ের, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পরিবার
    এই সময় | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়, বাসন্তী: বাড়ির মেজো ছেলে হলেও অভাবের সংসারে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হতো বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালি উপকূল থানা এলাকার হিরণ্ময়পুরের বাসিন্দা রবীন্দ্র মণ্ডলের ছেলে সৌমেনকে। সুন্দরবন এলাকা থেকে সৌমেন সংসারের হাল ফেরাতেই কলকাতার সল্টলেক, নিউ টাউনে ডেলিভারি বয় হিসাবে কাজ করতেন। সেই সামান্য উপার্জনেই এতদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল সংসার। গত ১৩ অগস্ট সল্টলেকে গাড়ি দুর্ঘটনায় আগুনে ঝলসে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে সৌমেনের। ছেলের বীভৎস মৃত্যুর শোককে ছাপিয়ে গিয়েছে অনটন ও অনাহারের যন্ত্রণা। সরকারি বা বেসরকারি কোনও সাহায্য না পেয়ে দিশেহারা পরিবার।

    সৌমেনের বাবা রবীন্দ্র মণ্ডল অন্ধ্রপ্রদেশে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ধান রোয়ার কাজ করতেন। সৌমেনের দাদা সুপ্রিয় ঢালাই মিস্ত্রির কাজ করলেও পাড়া গাঁয়ে সেই কাজ খুবই অনিয়মিত। ছেলের অকাল মৃত্যুর খবর পেয়ে অন্ধপ্রদেশ থেকে কাজ ছেড়ে বাসন্তীর গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছিলেন রবীন্দ্র মণ্ডল। তার পর থেকে পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে পরিবারের পাঁচ জন সদস্যকে।

    এখনও পর্যন্ত সৌমেনের পরিবার পায়নি কোনও সরকারি সাহায্য। মাথা গোঁজার ঠাঁই একটি বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে ঋণের জালে জর্জরিত পরিবারটি বর্তমানে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য প্রার্থনার জন্য বাড়িতে ছেলের ছবি বুকে আগলে রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা চন্দনা মণ্ডল।সুপ্রিয় বলেন, 'ভাইয়ের পাঠানো টাকাতেই আমাদের সংসার চলত। আমি গ্রামে যেটুকু কাজ করতাম তাতে সে ভাবে কিছু হতো না। ভাই মারা যাওয়ার পর দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের এখনও দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু কাগজপত্র পেয়েছি। জানতে পারিনি গাড়িটি কে চালাচ্ছিল।'

    পাড়াপড়শিরা মাঝেমধ্যে খাবার দিলেও বেশিরভাগ দিনই নিরন্ন অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে পরিবারের পাঁচজনকে। পরিবারের একমাত্র ভরসা সৌমেনের মৃত্যু আজও চোখের জল থামেনি বাবা রবীন্দ্র মণ্ডলের। তিনি বলেন, 'মাথা গোঁজার একটা আস্তানা করতে আমাদের অনেকগুলো টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছে। এখনও বাড়িটির ছাদ হয়নি। কোনও রকমে কুঁড়ে ঘরে আমরা বসবাস করছি। ঝড় বৃষ্টি এলে কোথায় যে থাকব জানি না। ছেলে যে কোম্পানির হয়ে কাজ করতো তারাও কোনও সাহায্য করেনি।' বাড়িতে বসে ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে অঝোর কান্নায় ভেসে মা চন্দনা বলেন, 'আমাদের ভালো রাখতেই ছেলে কাজ করত। সবার সামনে ছেলেটা কষ্ট পেতে পেতে মারা গেল। বড় ছেলেরও কাজ নেই। কী করে আমাদের চলবে?' বৃহস্পতিবারই বিকেলে সৌমেনের বাড়িতে মৃতের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন বাসন্তী ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব। বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নুর ইলাহি গাজি বলেন, 'আমরা অসহায় পরিবারের পাশে রয়েছি। সরকারি সাহায্য যাতে ওরা পায় তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।'

  • Link to this news (এই সময়)