• টাকার লোভ দেখিয়ে গরিব মানুষের বীর্য 'কেড়ে' নিচ্ছে বড়লোকরা! হাদরাবাদে চাঞ্চল্যকর ঘটনা 
    আজকাল | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  হায়দরাবাদের সেকেন্দ্রাবাদে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ ও স্বাস্থ্য দপ্তরের  যৌথ অভিযানে একটি অবৈধ ফার্টিলিটি ল্যাবের হদিস মিলেছে। শহরের রেজিমেন্টাল বাজার এলাকায় গড়ে ওঠা ওই ল্যাবটির কার্যক্রম ছিল সম্পূর্ণ অনিবন্ধিত এবং ২০২১ সালের অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি (রেগুলেশন) আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযানে পুলিশ মোট সাত জনকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রটির ম্যানেজার পঙ্কজ সোনি, ক্যাশিয়ার সম্পথ, একাধিক দালাল এবং আসাম থেকে আসা এক ডিম্বাণু দাতা। অভিযানের সময় ল্যাব থেকে বাজেয়াপ্ত  করা হয় ১৭ জন শুক্রাণু দাতা ও ১১ জন ডিম্বাণু দাতার নমুনা, একাধিক আধার কার্ড এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ল্যাবটি মূলত আর্থিকভাবে অতি দুর্বল মানুষদের—যেমন দিনমজুর, ভিখারি বা রাস্তাঘাটের পথচারীদের প্রলোভন দেখিয়ে অল্প টাকার বিনিময়ে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করত এবং পরে সেগুলি বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে বিক্রি করত।

    এই ল্যাবের বিরুদ্ধে এআরটি আইনের একাধিক ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল যখন সম্প্রতি সৃষ্টি  ফার্টিলিটি সেন্টার নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিশাল এক সারোগেসি ও শিশু বিক্রির চক্র ফাঁস হয়। সেই কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক আথালুরি নম্রতা এবং সহযোগীরা নথি জাল করে নবজাতককে সারোগেসির নামে বিক্রি করছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার পর থেকেই তেলেঙ্গানার বিভিন্ন ফার্টিলিটি ক্লিনিকের উপর কড়া নজরদারি শুরু হয় এবং একের পর এক অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রকাশ্যে আসতে থাকে। পুলিশের অনুমান, এই ব্যবসার সঙ্গে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন এবং গোটা রাজ্যে আরও অনেক ল্যাব একইভাবে গোপনে চালু থাকতে পারে।

    শহরে বাড়তে থাকা অবৈধ সারোগেসি চক্র সমাজে এক গভীর সংকটের দিক তুলে ধরেছে। একদিকে সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে গরিব মানুষের দুরবস্থাকে পুঁজি করে গড়ে উঠছে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন বাজার। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই নেটওয়ার্ক কেবল স্থানীয় নয়, আন্তঃরাজ্য স্তরেও সক্রিয়, এবং এর শিকড় ভাঙতে আরও ব্যাপক অভিযানের প্রয়োজন হবে।

    হায়দরাবাদের টাস্ক ফোর্স সম্প্রতি সেকেন্দ্রাবাদের একটি বেসরকারি শুক্রাণু ব্যাংকে হানা দিয়ে গুরুতর অনিয়মের হদিস পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এটি বেআইনি সারোগেসি ও শিশু বিক্রির চক্রের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ক্লিনিকটি আসলে আহমেদাবাদের একটি ফার্টিলিটি সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত এবং পথচারী ও ভিখারিদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা দিয়ে শুক্রাণু সংগ্রহ করত। সংগৃহীত নমুনাগুলি পরে আহমেদাবাদের বিভিন্ন ফার্টিলিটি সেন্টারে পাঠানো হত। অভিযানে মোট ১৬টি নমুনা জব্দ করা হয়েছে এবং সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ক্লিনিকের কর্মী ও পরিচালকেরা। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

    ঘটনাটি নতুন নয়। এর আগেও তেলেঙ্গানার একাধিক ফার্টিলিটি সেন্টারে অনিয়ম ধরা পড়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে রাজস্থানের এক দম্পতি সেকেন্দ্রাবাদে আইভিএফ প্রক্রিয়ার জন্য আসেন। তখন এক চিকিৎসক তাঁদের সারোগেসি নেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা পরিশোধের পর এক বছরের মাথায় তাঁরা একটি শিশু পান। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় প্রকাশ পায়, শিশুটির সঙ্গে তাঁদের কোনও জেনেটিক সম্পর্ক নেই। এতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং স্পষ্ট হয় যে বহু বছর ধরে একটি বিস্তৃত প্রতারণা চক্র চলছে, যেখানে জাল নথি, ভুয়ো আইভিএফ এবং শিশুবিক্রির মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারিত করা হয়েছে।

    এই ধরনের অনিয়ম কেবল চিকিৎসা নৈতিকতার বড় লঙ্ঘন নয়, বরং গরিব মানুষের অসহায়তাকে ব্যবহার করে একটি কালোবাজারি ব্যবসা গড়ে তোলার নির্মম উদাহরণ। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে একাধিক ফার্টিলিটি সেন্টারের উপর নজরদারি শুরু করেছে এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের  বিশেষ দলগুলি গোটা শহরের ক্লিনিক ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন চালাচ্ছে। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, এই নেটওয়ার্ক শুধু হায়দরাবাদ বা সেকেন্দ্রাবাদেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে বৃহত্তর অভিযানের মাধ্যমেই এই প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হবে।
  • Link to this news (আজকাল)