বিয়েবাড়িতে আকণ্ঠ মদ্যপান করে রাস্তা ভুলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে হাজতবাস ব্যক্তির!
আজকাল | ২৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ দেড় বছরের বন্দিজীবন শেষে অবশেষে নিজের মাটিতে ফিরলেন কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের উছলপুকুরি গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক মহম্মদ ছদ্দিন মিঞা। বুধবার বিকেলে চ্যাংড়াবান্ধা আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা—ভাই সিরাজুল ও জসিরুদ্দিন, দিদি ফতেমা বিবি। প্রিয়জনকে ফিরে পেয়ে চোখের জল লুকোতে পারেননি কেউই।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, পেশায় রাজমিস্ত্রি ছদ্দিন মিঞা মূলত দক্ষিণ ভারতে গিয়ে রোজগার করতেন। প্রায় দেড় বছর আগে আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি গ্রামে ফেরেন। সেখানেই জামালদহের এক বিয়েবাড়িতে মদ্যপ অবস্থায় অন্ধকারে পথ ভুলে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান বাংলাদেশে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির হাতে ধরা পড়ে তাঁকে লালমনিরহাট থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই থেকেই শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ কারাবাস।
ছদ্দিন নিখোঁজ হওয়ায় পরিবারে তৈরি হয়েছিল প্রবল উৎকণ্ঠা। কয়েকদিন পর বাংলাদেশ থেকে জানানো হয় যে তিনি লালমনিরহাট জেলে বন্দি আছেন। এরপর থেকেই পরিবার নানা দপ্তরে আবেদন জানায় এবং ভারত সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। অবশেষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া মেনে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হয়। ফেরার দিন সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের পুলিশ, বিএসএফ ও বিজিবির কর্মকর্তারা।
দেশে ফিরেই আবেগে ভেসে ওঠেন ছদ্দিন মিঞা। তিনি বলেন, “অন্ধকারে পথ হারিয়ে এক ভুলের কারণে দেড় বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই পরিবারের কথা মনে পড়ত। কবে ফিরতে পারব সেই আশাতেই দিন গুনতাম।” নিজের সন্তান, জামাই, পুত্রবধূ ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলেও জানান। ছদ্দিনের ভাই সিরাজুল মিঞা জানান, “দাদার খবর না পেয়ে আমরা হতাশায় ভুগছিলাম। পরে যখন জানতে পারি তিনি বাংলাদেশে বন্দি আছেন, তখন তাঁকে ফেরানোর জন্য একাধিক জায়গায় দরখাস্ত করি। অবশেষে আজ তাঁকে ফিরে পেলাম। বাড়িতে এখন উৎসবের পরিবেশ, আত্মীয়রা সবাই জড়ো হয়েছেন।”
মেখলিগঞ্জের এসডিপিও আশীষ পি সুব্বা বলেন, “উছলপুকুরির বাসিন্দা ছদ্দিন মিঞা পথ ভুলে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় তাঁকে দেড় বছর জেল খাটতে হয়। গত সপ্তাহেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি আসে। বুধবার সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।”এক ভুল পদক্ষেপের কারণে দেড় বছরের বন্দিজীবন—তারপর অবশেষে ঘরে ফেরা। ছদ্দিন মিঞার দেশে ফেরার ঘটনায় তাঁর পরিবারে যেমন স্বস্তি নেমে এসেছে, তেমনই গ্রামবাসীর মাঝেও ছড়িয়েছে আনন্দ।