আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিনের আলো ফুরোতে না ফুরোতেই অন্ধকার নামলেই বেতাই গ্রাম যেন মাতালদের আখড়ায় পরিণত হয়। বাজারের ধারে ধাবা কিংবা খোলা আকাশের নীচে বসে মদের আসর জমে ওঠে প্রতিদিন। সন্ধ্যার পর থেকেই আতঙ্ক বাড়ে, ফলে নারীরা বাজার বা আশপাশের রাস্তায় বেরোতে সাহস পান না। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই বদনাম ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে, এমনকি ছেলে-মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রেও গ্রামকে এড়িয়ে চলছেন আশপাশের মানুষজন।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, তরুণ পড়ুয়াদেরও মদ্যপানে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলছেন বাসিন্দারা। বহুবার বিষয়টি পুলিশ, প্রশাসন, এমনকি বাজার কমিটি ও পঞ্চায়েতকে জানানো হলেও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। এবার মাতালদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে পথে নেমেছেন এলাকার মহিলারা। স্থানীয় রানি লক্ষ্মীবাঈ মহিলা সমিতি ও প্রীতিলতা মহিলা সমিতির সদস্যারা হাতে কলমে উদ্যোগ নিয়ে কলেজ গেট ও বাজার এলাকায় ব্যানার টাঙিয়ে নেশাগ্রস্তদের সর্তক করেছেন।
তেহট্ট থানার অন্তর্গত সীমান্তবর্তী এই গ্রামে রয়েছে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত তিনটি মদের দোকান। তবে স্থানীয়দের দাবি, আশপাশের রেস্তরাঁ ও খাবারের দোকানগুলোতেই গোপনে চলছে বেআইনি মদ বিক্রি। ফলে সহজলভ্য হওয়ায় দিন দিন আসক্তি বাড়ছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুলিশ বা আবগারি দপ্তরের অভিযান চালানোর আগেই বেআইনি কারবারিদের কাছে খবর পৌঁছে যায়।
ড. বি. আর. আম্বেদকর কলেজের প্রিন্সিপাল পীযূষকান্তি দেব জানিয়েছেন, কলেজ চত্বরে মদ বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্যের কথা লিখিত আকারে পুলিশের কাছে জানানো হয়েছে। কলেজ খোলার পর প্রশাসনের সঙ্গে আবারও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিশও জানিয়েছে, মাঝেমধ্যেই অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকান থেকে মদ বাজেয়াপ্ত ও বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
কিন্তু মহিলা সমিতির সদস্যা কাজল মণ্ডল ও সবিতা মল্লিকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন—“মাতালদের দাপটে এলাকার পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, বহু পরিবার বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও এড়িয়ে যাচ্ছেন। এর আগে বহুবার প্রতিবাদ করেও বেআইনি মদের রমরমা বন্ধ হয়নি। তাই এবার আমাদেরই এগিয়ে আসতে হচ্ছে।” বেতাইবাসীর প্রশ্ন, পুলিশের ভূমিকা যদি যথাযথ হতো, তবে কি এভাবে প্রতিদিন মাতালদের দাপটে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হতো?
মদের সহজলভ্যতা ও মাতলামির দৌরাত্ম্য শুধু একটি গ্রামের শান্তি নষ্ট করছে না, বরং গভীর সামাজিক অভিঘাতও ফেলছে। সন্ধ্যার পর নারীদের বাইরে বেরোনো দুরূহ হয়ে পড়েছে, ফলে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ হচ্ছে। যুবকদের মধ্যে আসক্তি শিক্ষার পরিবেশকে ভেঙে দিচ্ছে, পরিবারগুলির আশা-আকাঙ্ক্ষা মুছে দিচ্ছে। বিয়ে না হওয়া তরুণ-তরুণীদের ব্যক্তিগত জীবনেও হতাশা বাড়াচ্ছে। ক্রমাগত ভয়ের আবহে পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্যও বিপজ্জনক। এভাবে মদ কেবল ব্যক্তিকে নয়, সমাজকেও ভেতর থেকে ধ্বংস করছে।