শ্রেণির বদলে মদ-যৌনতায় ডুবে বঙ্গ সিপিএম! এবার অভিযোগ তরুণ নেতার বিরুদ্ধে ...
আজকাল | ২৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বঙ্গ সিপিএম-এ ফের যৌন অভিযোগকে ঘিরে চাঞ্চল্য। এবার অভিযোগের তীর এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির পরিচিত মুখের বিরুদ্ধে। দমদম-লেকটাউন অঞ্চলের এই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ এনেছেন এসএফআইয়ের মহিলা নেত্রী। তাঁর অভিযোগ, বারবার মদ্যপানের প্রস্তাব, ফাঁকা ফ্ল্যাটে ডাকা, এমনকি যৌন সম্পর্কের জন্য চাপ দেওয়ার মতো কাণ্ড ঘটিয়েছেন ওই নেতা। অভিযোগপত্র ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।
তবে এখানেই শেষ নয়। অভিযোগকারিণীর দাবি, যৌন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে সংগঠনের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি রাজ্য সিপিএমের ফেসবুক পেজে সংবাদ পাঠিকা হওয়ার প্রতিশ্রুতিও ভেস্তে যায়। শুধু তাই নয়, তাঁকে দিয়ে অন্য এক কর্মীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা যৌন হেনস্থার মামলা সাজাতে’ চেয়েছিলেন অভিযুক্ত নেতা।
সংগঠনের ভেতর থেকেও উঠছে অভিযোগের ঢেউ। উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রাক্তন ছাত্র নেতার (বর্তমানে এলাকার যুব সংগঠনের কর্মী) দাবি ওই নেতা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সংগঠনের সম্মেলন আটকে দিয়েছেন। কেউ চেষ্টা করলেই বাধা দিয়েছেন। সম্মেলনের নীতি অনুসারে যখনই বুঝতে পেরেছেন কমিটির দখল 'হাতছাড়া' হতে চলেছে, তখনই, এমনকি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও ধাক্কাধাক্কি করেছেন! এতটাই ক্ষমতাশালী তিনি।শুধু তাই নয়, আরেক এক মহিলা কর্মীকে ‘অতৃপ্তি মেটাতে’ চাপ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে সংগঠনের ভেতরে ক্ষোভ জমা হচ্ছে।
অভিযোগকারীরা আরও বলছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক শীর্ষ সিপিএম নেতার মদতেই ওই নেতা এতটা ‘দাপুটে’। সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের একাংশও নীরব। শোনা যাচ্ছে, ছাত্র জেলা কমিটির এক বৈঠকে বিষয়টি ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টা করেন এক শীর্ষ নেতা। এ নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেক কর্মী।
সমাজ মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে অভিযুক্ত ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে একাধিক স্ক্রিনশট, ভয়েস মেসেজ, অভিযোগপত্রের কপি। যদিও সেগুলির সত্যতা আজকাল ডট ইন স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করেনি। তবে বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় সংগঠনের অস্বস্তি আরও বাড়ছে।
এর আগেও একই ধরনের ঘটনায় একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছে সিপিএম। কয়েক মাস আগে আলিমুদ্দিনে প্রকাশ্যেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন এক মহিলা কর্মী। ২০২৫ সালেই কলকাতার এক যুব নেতার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠে আসে, যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ছড়ায়। আবার এক সিটু নেতার এক এস এস সি চাকরি প্রার্থীর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। প্রতিবারই দলীয় নেতৃত্ব শৃঙ্খলাভঙ্গের কথা বলে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বিরোধীদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘অভিযুক্তদের বাঁচাতেই’ সক্রিয় থেকেছে নেতৃত্ব।
এই নতুন কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে শুরু করে বিজেপি ছাত্র সংগঠন পর্যন্ত মাঠে নেমেছে। তাদের দাবি, সিপিএম নৈতিকতার মুখোশ পরে বসে থাকে, অথচ বারবার নিজেদের সংগঠনেই যৌন হেনস্থার ঘটনা ধামাচাপা দেয়।
এসএফআই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক আকাশ কর সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংগঠনিক প্রক্রিয়া মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সুরে রাজ্য নেতৃত্বও জানিয়েছে, কোনওভাবেই যৌন অভিযোগ বরদাস্ত করা হবে না। যদিও তার বিরুদ্ধেই একাংশের অভিযোগ তিনি বিষয়টি নিয়ে নাকি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনাই হতে দেন নি! কিন্তু তৃণমূল এবং বিজেপি প্রতিপক্ষের প্রশ্ন—“অভিযুক্তর মাথায় যখন শীর্ষ নেতৃত্বের হাত, তখন কি আদৌ ন্যায় হবে?”
ফলে স্পষ্ট, একদিকে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার চেষ্টায় থাকা সিপিএম এখন নিজের ঘরে তৈরি কেলেঙ্কারিতে চাপে। অতীতের মতো এবারও অভিযোগের স্রোত থামবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে রাজনীতির অন্দরে।