• যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অস্ত্রেও চাই গ্ল্যামার! কুমোরটুলিতে আরও ‘স্মার্ট’ দুর্গার অস্ত্রভাণ্ডার
    প্রতিদিন | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • পৌষালি কুণ্ডু: রাফায়েল ফাইটার জেট থেকে ছোড়া স্ক‌্যাল্প মিসাইল গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ডেরা। মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্মার্ট অস্ত্রেই শত্রুনিধন হয়েছিল। পাক ড্রোন ও মিসাইলের হামলা ঠেকিয়েছিল এস-৪০০ বা ‘সুদর্শন চক্র’। ভারতের অস্ত্রভাণ্ডার যখন এহেন অত‌্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত, তখন দশভুজা কী করে পিছিয়ে থাকেন? তাঁর হাতেও তো চাই স্মার্ট অস্ত্র! দশ হাতের দশরকম ‘ওয়েপন’-এ চাই বৈচিত্র‌!

    যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেবীকে আজকাল ডিজাইনার বুটিক শাড়ি পরানো হয়। মণ্ডপ নির্মাণের থিম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। তা হলে মায়ের হাতে মানানসই হয়ে উঠতে ত্রিশূল, গদার লুকও তো স্মার্ট হতে হয়! তা-ই হচ্ছে। নতুন কাটিং, নতুন রঙে ‘স্মার্ট’ হচ্ছে দেবী দুর্গার অস্ত্রশস্ত্র। ব‌্যাপারটা খোলসা করলেন কুমোরটুলির অস্ত্রসজ্জার দোকানি প্রতাপচন্দ্র দাস। পাটনা থেকে আসা অর্ডারের বিল বানানোর ফাঁকে তিনি জানালেন, ‘‘লোকে এখন রঙিন বা অভ্রখচিত অস্ত্র চাইছে। ক্রেতার চাহিদা বুঝে তাই সাবেকি নকশার উপর লাল, হলুদ, সবুজ, গোলাপি রং করা হচ্ছে। অস্ত্রের গ্ল‌্যামারও বাড়ছে। সোনালি টিনের পাত দিয়ে তৈরি অস্ত্র নানা নকশায় রঙিন করায় বিক্রিও ভালো।”

    সাধারণত হিট ট্রিটমেন্টে সোনালি রং করে টিনের পাত মার্কিং করে কাটা হয়। কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে রয়েছে দেবদেবীর অস্ত্র-কারখানা। গদা, খাঁড়া, শঙ্খ, চক্র, ত্রিশূল, তির-ধনুক, বজ্র, টাঙি, ঢাল, অঙ্কুশ, সরস্বতীর বীণা, লক্ষ্মীর ঝাঁপি-সহ অস্ত্রের সম্পূর্ণ প‌্যাকেজ ২০০-৮০০ টাকা। পুজোর বাজেট যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা, সেখানে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী, অসুরের হাতে ধরা অস্ত্রের দাম এত কম! উলুবেড়িয়ায় প্রতাপবাবুর কারখানায় কর্মী আট-ন’জন। এ বছর কাঁচা মালের দাম বাড়ায় অস্ত্রের দাম দু-পাঁচ টাকা বেড়েছে শুধু।

    তাঁর আক্ষেপ, “পুজোয় অনুদান বাড়লেও তার সুফল পৌঁছয় না গ্রামের অস্ত্র কারিগরদের কাছে। সব টিনের অস্ত্রই হাতে কেটে বানাতে হয়। শুধু গদা তৈরি করতে লাগে বলপ্রেস, পাওয়ার প্রেস মেশিন। পাইকারি ব‌্যবসায়ীরাও অস্ত্রের দাম বাড়াতে চায় না। ওদের ভয়, প্রতিযোগিতার মার্কেট। দাম বাড়ালে বিক্রি কমবে। ফলে কারিগররা ইচ্ছা থাকলেও অস্ত্রকে আরও দর্শনধারী করতে পারছেন না। টাকা না বাড়ালে এই শিল্প টিকবে না।” তবে পিতলের অস্ত্রের দাম এবছর কেজি পিছু ১০০ টাকা করে বেড়েছে। শোভাবাজারের পিতল ব‌্যবসায়ী অমরনাথ সাউ জানালেন, “আট-দশ ফুট দুর্গার পিতলের অস্ত্রের সেট ১২, ১০০ টাকা। ওজন সাড়ে পাঁচ কেজি। ছ’ফুট দুর্গার অস্ত্রের ওজন ৩ কেজি ৬০০ গ্রাম। দাম আট হাজার টাকা। পাঁচ ফুট দুর্গার পিতলের অস্ত্রের সেট ২ কেজি ২০০ গ্রাম, মূল‌্য ৬০০০ টাকা। ডিজাইন সেই সাবেকিই। তবে অস্ত্রের দু’দিকে বুটি নকশার ডিজাইন থাকলে দাম একটু বেশি।”

    বাংলায় তৈরি টিনের অস্ত্রের বাজার ছড়িয়ে রয়েছে দেশজুড়ে। দুর্গাপুজোয় বিহার, অসম, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, মধ‌্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে অস্ত্র পাঠিয়ে ভালই ব‌্যবসা হয় প্রতাপবাবুদের। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশে ব্র‌্যাঘ্রবাহিনীর দুর্গার অস্ত্রও যায় কলকাতা থেকে। শহরের সিমলা স্ট্রিটে ও উলুবেড়িয়ায় রয়েছে বেশ কয়েকটি অস্ত্র কারখানা। তবে তাদের কারও লাইসেন্স নেই! কারণ দেবদেবীর অস্ত্র কারখানার জন‌্য লাইসেন্সের দরকারই পড়ে না যে!
  • Link to this news (প্রতিদিন)