• ফ্যান-এসি চলছে, চেয়ার ফাঁকা! ‘ফাঁকিবাজ’ সরকারি কর্মীদের হাজিরা দিতেই দিলেন না পুরপ্রধান
    এই সময় | ২৯ আগস্ট ২০২৫
  • ‘১২টায় অফিস আসি, দুটোয় টিফিন…’। সরকারি অফিসে এই প্রবণতা নতুন নয়। কর্মীদের ‘আলস্য’ দূর করতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন নবান্নে বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভাগুলিতে সেই কড়াকড়ি নেই। ফলত, কর্মীদের একাংশের গাফিলতির জন্য ভুগতে হয় নাগরিকদের। কর্মীদের নিত্যদিন দেরিতে হাজিরায় লাগাম টানতে শুক্রবার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন খানের। হাজির খাতা বগলদাবা করে নিয়ে গেলেন নিজের ঘরে।

    শুক্রবার ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ১১টায় পুরসভার বিভিন্ন দপ্তরে হঠাৎ হাজির হন পুরপ্রধান সৌমেন খান। বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে তিনি দেখেন, ঘরের ভিতরে লাইট, ফ্যান, এসি চললেও একের পর এক চেয়ার ফাঁকা! এমন দৃশ্য দেখে চটে লাল পুরপ্রধান। দেরিতে ঢোকা কর্মীদের কড়া ধমক দেওয়ার পাশাপাশি নিয়ম-শৃঙ্খলার পাঠও দেন তিনি। সব দেখেশুনে তখন কার্যত ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয় কর্মীদের।

    কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, হেলতে দুলতে বেলা ১২টা বা সাড়ে ১২টায় ঢোকার দিন শেষ! পুর কর্মীদের অফিসে ঢুকতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই। আর তা না হলেই হাজিরা খাতায় পড়বে লাল কালি। ‘অনুপস্থিত’ বলেই ধরা হবে তাঁকে। শুক্রবারের পর বিষয়টি যে হাড়েমজ্জায় বুঝে গিয়েছেন মেদিনীপুর পুরসভার কর্মীরা, তা বলাই বাহুল্য!

    মেদিনীপুর পুরসভা সূত্রে খবর, মেদিনীপুর পুরসভায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে কর্মীসংখ্যা প্রায় ১২০০ জন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি কর্মীই দেরি করে আসেন। কেউ হেলতে দুলতে ১২টায় ঢোকেন আবার কারও সাড়ে ১২টাও বেজে যায়। ফলে বিভিন্ন জরুরি কাজে পুরসভায় সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ ওঠায় নড়েচড়ে বসল পুরসভা। এ দিন যাঁরা ১১টা ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছেছেন তাঁদের সই করতে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের অর্থাৎ আরও দেরি করে যাঁরা পৌঁছন, তাঁদের হাজিরার সই করতেই দেওয়া হয়নি।

    পুরপ্রধানের উদ্যোগে খুশি সাধারণ নাগরিকরা। বিভিন্ন কাজে পুরসভায় আসা বিপ্লব বর্মন, সন্তু অধিকারী, নির্মল জানা, বিমলা মাজিরা বলেন, ‘১০টার সময় পুরসভায় কোনও কাজ নিয়ে এলে, বাড়ি ফিরতে ১টা-২টো বেজে যায়। হবে না কেন! ১২টার সময় তো বাবুরা পৌঁছন। তারপর কাজ শুরু হয়।’

    পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘শহরবাসীকে পরিষেবা দেওয়ার জন্যই পুরসভা। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরেই পুরকর্মীদের দেরিতে আসার ফলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। এই বিষয়টি আর বরদাস্ত করা হবেনা।’ তিনি এও জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ রয়েছে, সকলকে সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে পরিষেবা দিতে হবে। সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে অফিসে আসতেই হবে।

  • Link to this news (এই সময়)