দ্রৌপদী মুর্মুকে লেখা জিনপিংয়ের 'গোপন' চিঠিই যেন সলতে, উন্নতির পথে ভারত-চীন সম্পর্ক
আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে একটি গোপন চিঠি পাঠিয়েছেন। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এমনই জানানো হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চিঠি দিলেও, চিঠির বার্তা মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছিল। চিঠিতে এমন সব মার্কিন চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়, যা চীনের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সরকারি সূত্রে খবর, জুন মাসের আগে মোদি প্রশাসন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় টানাপোড়েন চলছিল, পাশাপাশি ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি নিয়ে সরব হওয়ায় নয়াদিল্লি বিরক্ত ছিল।
তবে আগস্ট থেকে ছবি পাল্টাতে শুরু করে। ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কে ভারতীয় অর্থনীতি চাপে পড়ার পর দুই দেশ ২০২০ সালের প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের পরে অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ মেটাতে আলোচনা জোরদার করে। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদি সাত বছর পর প্রথমবার চীন সফরের পথে।
ভারত-চীনের এই ঘনিষ্ঠতা আমেরিকার জন্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিকে বেজিংয়ের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প হঠাৎ ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে সেই কৌশলকেই দুর্বল করে দেন। কারণ, ভারত রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রেখেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প আসলেই মহা শান্তিদূত ভারতকে শত্রুতে পরিণত করে তিনি দিল্লি ও বেজিংকে আবার কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর চীনা প্রেসিডেন্টের চিঠি ছিল ভারতের মন যাচাইয়ের চেষ্টা।
সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পটভূমিমোদি সরকার বহুদিন ধরেই চীনের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজছিল। কেন্দ্রীয় শাসক দলের যুক্তি ছিল, সম্পর্ক উন্নত হলে দুর্বল অর্থনীতিতে গতি আসবে এবং সীমান্তে সামরিক মোতায়েন সম্পর্কিত বিপুল ব্যয়ও কমানো যাবে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে দুই দেশ কাছাকাছি আসে। যদিও কয়েকটি জটিলতা এখনও এড়ানো যায়নি।
এ বছরের মার্চে শি জিনপিং রাষ্ট্রপতি মুর্মুকে চিঠি পাঠানোর পর চীনা নেতৃত্ব প্রকাশ্যে 'ড্রাগন-এলিফ্যান্ট ট্যাঙ্গো' শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে শুরু করে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যান ঝেং-সহ একাধিক শীর্ষ নেতা একই বক্তব্য পেশ করেন। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এই প্রক্রিয়ার অন্যতম চালিকাশক্তি। তিনি সীমান্ত আলোচনার বিশেষ প্রতিনিধি এবং ইতিমধ্যেই একাধিকবার বেজিং সফর করেছেন।
জুলাইয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর পাঁচ বছর পর প্রথমবারের মতো বেজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জয়শঙ্কর চীনকে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানান। জবাবে চীন ভারতকে সার ও রেয়ার আর্থ সরবরাহের আশ্বাস দেয়।
সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে কয়েকটি উদ্যোগ ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে। আগামী মাস থেকে দু'দেশের মধ্যে সরাসরি উড়ান চালু হবে। চীন ইউরিয়া সরবরাহ সহজ করেছে এবং ভারত চীনা নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা পুনরায় চালু করেছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, আদানি গ্রুপ চীনের বৈদ্যুতিক যান নির্মাতা বিওয়াইডির সঙ্গে অংশীদারিত্বের আলোচনা করছে। একইসঙ্গে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং জেএসডব্লিউ গ্রুপও চীনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে গোপন চুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে।
গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ওয়াং-এর সঙ্গে বৈঠকের পর মোদি প্রকাশ্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে স্বাগত জানান। আগামী ১ সেপ্টেম্বর সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনের ফাঁকে জিনপিং ও মোদির বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বড় কোনও চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবু পার্শ্ববৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন-ভারত ঘনিষ্ঠতার যৌক্তিকতা স্পষ্ট। চীনে মুদ্রাস্ফীতি কমছে এবং তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সৌর প্যানেলের মতো শিল্প অতিরিক্ত উৎপাদনে ভুগছে। অন্যদিকে, বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী নিয়ে ভারত, চীনের জন্য বড় বাজার হতে পারে। তবে মার্কিন শুল্ক যদি বহাল থাকে, তবে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৬০ শতাংশ কমতে পারে। ফলে জিডিপি প্রায় এক শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।