• প্রলয়ংকারী মেঘভাঙা বৃষ্টি! মৃত চার, নিখোঁজ দুই , আটকে একাধিক পরিবার, স্বপ্নরাজ্য এখন 'মৃত্যু উপত্যকা'
    আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিধসে সম্প্রতি একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভোরে রাজ্যের একাধিক জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে প্রবল ধস ও ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে। খবর অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়াও বহু পরিবার ধ্বংসস্তুপে আটকা পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, টেহরি ও বাগেশ্বর জেলাগুলোর পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। ভূমিধস ও কাদাজলের স্রোতে প্রায় ৪০টি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুদ্রপ্রয়াগ জেলার বাসুকেদার তেহসিলের বারের্থ ডুংগর টোক এবং চামোলি জেলার দেওয়াল এলাকা এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি।

    এবিষয়ে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ মুখ্যমন্ত্রী ধামি নিজেই পোস্ট করে জানান। তিনি জানান স্থানীয় প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। একনকী তিনি স্বয়ং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দুর্যোগ সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যকর উদ্ধার ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমি বাবা কেদারের কাছে সবার সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি।'

    রুদ্রপ্রয়াগের একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুরো এলাকা কাদা ও ধ্বংসাবশেষে ঢেকে গিয়েছে। স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে বহু পরিবার, তবে অনেকেই এখনও ভয়াবহ বিপদের অবস্থায় স্রোতের অপর পারে আটকে রয়েছেন।

    চামোলি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সন্দীপ তিওয়ারি সংবাদমাধ্যমে জানান, দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন এবং বহু গবাদিপশু ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার অনেক সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ত্রাণ ও উদ্ধারকারী বাহিনী দুর্গত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

    বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তরাখণ্ডে একাধিক জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যার ঘটনা ঘটছে। গত ২৬ অগাস্ট মুখ্যমন্ত্রী ধামি চামোলি জেলার থারালি এলাকায় ২২ অগাস্টের দুর্যোগ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, হিমালয় অঞ্চলে এমন দুর্যোগ কেন বারবার ঘটছে এবং কীভাবে এত বড় মাপের ধ্বংসাবশেষ জলের সঙ্গে নেমে আসছে- তা খতিয়ে দেখতে হবে।

    রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন সচিব বিনোদ কুমার সুমন জানান, ধামি চেয়েছেন ধরালি, উত্তরকাশীতে যেভাবে তদন্ত করা হয়েছিল, সেই ধাঁচে থারালির ঘটনাও পর্যালোচনা করা হোক।

    এই উদ্দেশ্যে ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (GSI), হিমালয়ান ভূতত্ত্ব নিয়ে কাজ করা ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট, জাতীয় জলবিদ্যুৎ ইনস্টিটিউট, রাজ্য ভূমিধস ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং রাজ্য সেচ বিভাগ-এই সংস্থাগুলোর বিশেষজ্ঞরা থারালি পরিদর্শনে যাবেন বলে জানানো হয়েছে।

    প্রসঙ্গত, অন্যদিকে হিমাচলে ২০ জুন থেকে শুরু হওয়া বর্ষার প্রকোপে এ পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (SDMA)। এর মধ্যে ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ভূমিধস, হঠাৎ বন্যা ও বাড়িঘর ধসের মতো বর্ষণজনিত কারণে। বাকি ১২৫ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, যার পেছনে প্রধান কারণ পিচ্ছিল রাস্তা ও কম দৃশ্যমানতা।

    মাণ্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। মোট ২০১টি রাস্তা, যার মধ্যে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম এনএইচ-০৩ (NH-03) রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুল্লু জেলা, যেখানে ভূমিধসের কারণে ৬৩টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই জেলায় এনএইচ-৩০৫ (NH-305)-এর খানাগ এলাকাতেও রাস্তা বন্ধ রয়েছে। কিন্নোর জেলা থেকেও এনএইচ-০৫ (NH-05)-এর টিনকু নাল্লা অংশে রাস্তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

    দুর্যোগের জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মাণ্ডি জেলায়। খবর পাওয়া গিয়েছে, সেখানে প্রায় ৪৪৮টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে লাহৌল-স্পিতি জেলায়। সেখানে উচ্চ ভোল্টেজ লাইনের ত্রুটির কারণে ১১২টি ট্রান্সফর্মার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কুল্লু ও মাণ্ডি জেলায় পানীয় জলের প্রকল্পগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে অনেক প্রকল্প ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)